কিডনী সমস্যার কারণ লক্ষণওপ্রতিকার সম্পর্কে জেনে নিন।
ভূমিকা:
কিডনি ব্যর্থতা, যাকে ডাক্তারি ভাষায় রেনাল ব্যর্থতা বলা হয়, এমন একটি অবস্থা যেখানে কিডনি পর্যাপ্তভাবে কাজ করার ক্ষমতা হারিয়ে ফেলে। অবিলম্বে সুরাহা না হলে গুরুতর স্বাস্থ্য জটিলতার কারণ হতে পারে। কারণগুলি বোঝা, লক্ষণগুলি সনাক্ত করা এবং সম্ভাব্য প্রতিকারগুলি নির্ণয় করা কিডনি ব্যর্থতা কার্যকরভাবে পরিচালনার গুরুত্বপূর্ণ দিক।
কিডনি বিকল হওয়ার কারণঃ
কিছু ঔষুধ:যারা বেশি ব্যথার ওষুধ খান তাদের কিডনি নষ্ট হওয়ার সম্ভাবনা বেশি থাকে। কিডনির কাজ হলো শরীর থেকে বর্জ্য পদার্থ এবং অতিরিক্ত তরল অপসারণ করা। কিন্তু কেউ যখন অতিরিক্ত ওষুধ খান তখন তার কিডনি আগের মত তরল বা ময়লা অপসারণ করতে পারেনা। আবার কিছু ওষুধ আছে যেগুলো রক্তের স্বাভাবিক প্রদাহকে বাধাগ্রস্ত করে।কিডনির সংক্রমণ এর জন্য যে ওষুধ গুলো বেশি দায়ী যেমন-আ্যন্টিবায়োটিক ওষুধ,এন্টি – ইনফ্লামেটরী ওষুধ,ব্যথা নাশক ওষুধ,ক্যান্সারের ওষুধ
দীর্ঘস্থায়ী কিডনি রোগ (CKD): CKD কিডনি ব্যর্থতার একটি প্রচলিত কারণ। এটি ঘটে যখন কিডনি ধীরে ধীরে সময়ের সাথে কার্যকারিতা হারায়। CKD-তে অবদান রাখার সাধারণ অন্তর্নিহিত অবস্থার মধ্যে রয়েছে উচ্চ রক্তচাপ, ডায়াবেটিস এবং অটোইমিউন রোগ।
একিউট কিডনি ইনজুরি (AKI): তীব্র রেনাল ফেইলিওর নামেও পরিচিত, AKI হল কিডনির কার্যকারিতা হঠাৎ কমে যাওয়া, প্রায়ই গুরুতর ডিহাইড্রেশন, সংক্রমণ, ওষুধের বিষাক্ততা বা আঘাতের মতো কারণের কারণে।
ডায়াবেটিস: গবেষণা থেকে জানা গেছে ২০- ৩০% ডায়াবেটিস রুগীরা তাদের জীবনের এক সময় কিডনি রীগে আক্রান্ত হয়েছেন। ডায়াবেটিস হলে শরীরের স্বাভাবিক এর চেয়ে বেশি শর্করার পরিমান বেড়ে যায়৷ যেহেতু ডায়াবেটিস রুগীদের শরীর ইনসুলিন সঠিক ভাবে কাজ করতে পারেনা।
যার ফলে অতিরিক্ত শর্করার প্রভাবে কিডনি ক্ষতিগ্রস্ত হয়।ডায়াবেটিস কিডনী রোগের প্রধান কারণ। উচ্চ রক্তে শর্করার মাত্রা কিডনির ফিল্টারিং ইউনিটগুলিকে ক্ষতিগ্রস্ত করে, যা কিডনি রোগের দিকে পরিচালিত করে।
উচ্চ রক্তচাপ (উচ্চ রক্তচাপ): ক্রমাগত উচ্চ রক্তচাপ কিডনিকে স্ট্রেন করতে পারে, বর্জ্য পণ্যগুলিকে কার্যকরভাবে ফিল্টার করার ক্ষমতাকে ক্ষতিগ্রস্ত করে।
পর্যাপ্ত পানি পান না করা:প্রতিদিন আমাদের সাত থেকে আট গ্লাস পানি পান করা শরীরের জন্য উপকারী।আর যারা অল্পপরিমান পানি পান করেন তাদের কিডনি রোগে আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা থাকে। ফলে অল্প পরিমান পানি পান না করাও কিডনি রোগের অন্যতম একটি কারন।
শরীরের মেটাবলিক এবং অন্যান্য কার্য সম্পাদনের জন্য পানির প্রয়োজন হয়। কিন্তু যখন শরীরে পানি থাকেনা তখন কিডনি বিকল হওয়া সহ বিভিন্ন রোগ দেখা দেয়।
জেনেটিক রোগ :কিডনী রোগ কিছুটা জেনেটিক রোগ, আপনার পরিবারের অতীতে কারো কিডনি রোগের সমস্যা থাকলে আপনার কিডনি রোগের ঝুঁকি অনেক বেশি। আপনার পারিবারিক কিডনি রোগের সমস্যা থাকলে আপনি অবশ্যই স্বাস্থ্যকর ভাবে জীবন যাপন করবেন এবং সময়মতো কিডনি পরীক্ষা করাবেন।
অটোইমিউন ডিসঅর্ডার: লুপাস এবং আইজিএ নেফ্রোপ্যাথির মতো অবস্থা কিডনিতে প্রদাহ এবং ক্ষতির কারণ হতে পারে, অবশেষে কিডনি ব্যর্থতার দিকে পরিচালিত করে।
পলিসিস্টিক কিডনি ডিজিজ (PKD): এই জেনেটিক ডিসঅর্ডার কিডনিতে তরল-ভরা সিস্ট গঠনের দিকে নিয়ে যায়, ধীরে ধীরে তাদের কার্যকারিতা নষ্ট করে।
অস্বাস্থ্যকর ডায়েট : একটি অস্বাস্থ্যকর খাবার খাওয়া, যেমন প্রক্রিয়াজাত খাবার, লবণ এবং চিনির পরিমাণ বেশি ঝুঁকি বাড়াতে পারে।
ধূমপান ও অ্যালকোহল ত্যাগ করা:কিডনী রোগ থেকে মুক্তি পেতে হলে আপনাকে অবশ্যয় ধূমপান এবং অ্যালকোহল মুক্ত জীবনযাপন করতে হবে কারণ ধূমপান এবং অ্যালকোহল কিডনি রোগের ঝুঁকি বাড়ায়।
কিডনি ব্যর্থতার লক্ষণ:
অরুচি:শরীরের বর্জ্য পদার্থের আরেকটি উপাদান হচ্ছে অ্যামোনিয়া। অ্যামোনিয়া যখন রক্তে মেশে যায় তখন তা শরীরে প্রোটিন নষ্ট করে ফেলে। কিডনীর অক্ষমতার কারণে শরীর বর্জ্য হিসেবে অ্যামোনিয়া ফিল্টার করতে পারে না।ফলে রক্তে অত্যাধিক পরিমাণের অ্যামোনিয়া বেড়ে গিয়ে মুখে অরুচি, ওজন হারানোর মতো সমস্যার সৃষ্টি করেকরতে পারে।
পায়ের পাতা ও গোড়ালি ফুলে যাওয়া: কিডনির কার্যকারিতা কমে গেলে শরীরে সোডিয়ামের পরিমাণ অনেক সময় বেড়ে যায়। যার ফলস্বরূপ রোগীর পায়ের পাতা এবং পায়ে গোড়ালি ফুলে যায়। এই পায়ের নীচের অংশ ফুলে যাওয়া ফলে আমাদের শরীরে হৃদরোগ ও লিভারের নানা জটিলতা দীর্ঘমেয়াদী সমস্যা তৈরি করতে পারে।
প্রস্রাবের পরিবর্তন:যদি কারও প্রায়ই বিশেষ করে রাতের বেলায় ঘন ঘন মূত্রত্যাগ বা প্রস্রাবের বেড়ে যায় তাহলে বুঝতে হবে এটা কিডনি রোগের লক্ষণ। কিডনির ছাঁকনি গুলো যখন নষ্ট হয়ে যায় তখন প্রস্রাবের বেগ বৃদ্ধি পায়। এছাড়া ঘন ঘন মূত্রত্যাগ ইউরিন ইনফেকশনেরও পূর্ব লক্ষণ।
আবার কখন অনেক ক্ষেত্রে পুরুষদের প্রোস্টেট গ্লেন্ড বড় হয়ে গেলেও এ ধরনের উপসর্গ দেখা দিতে পারে আবার কোন কোন ব্যক্তি ক্ষেত্রে ফেনাযুক্ত বা রক্তাক্ত প্রস্রাবের সাথে প্রস্রাবের ফ্রিকোয়েন্সি এবং পরিমাণে পরিবর্তন অনুভব করতে পারে।
শ্বাসকষ্ট:যখন কিডনি কাজ করা বন্ধ করতে শুরু করে, তখন শরীরের বর্জ্য পদার্থ রক্তে মিশতে শুরু করে। এই বর্জ্য পদার্থের বেশিরভাগই হচ্ছে অম্লীয় পদার্থ। তাই এই বর্জ্য যখন রক্তের সাথে ফুসফুসে পৌঁছায় তখন ফুসফুস সেই বর্জ্য বের করার জন্য কার্বন ডাই অক্সাইড ব্যবহার করা শুরু করে।
যার কারণে পর্যাপ্ত অক্সিজেন ফুসফুসে ঢুকতে পারে না। এতে আপনার শ্বাসকষ্টের সমস্যা হতে পারে।
বমি বমি ভাব এবং বমি: কিডনি বিকল হয়ে গেলে শরীর থেকে সমস্ত টক্সিন বা ক্ষতিকর পদার্থ মূত্রের মধ্যে দিয়ে বেরোয় না। কিডনির সমস্যার ফলে শরীরেই সেই ক্ষতিকর পদার্থগুলি জমতে থাকে। যা থেকে বমি বমি ভাব দেখা দিতে পারে। রক্ত প্রবাহে বিষাক্ত পদার্থগুলি বমি বমি ভাব এবং বমি সহ গ্যাস্ট্রোইনটেস্টাইনাল ব্যাঘাত ঘটাতে পারে।
চুলকানি এবং ত্বকে ফুসকুড়ি: কিডনি ব্যর্থতার ফলে রক্তে বর্জ্য পদার্থ জমা হতে পারে, যার ফলে ত্বকে চুলকানি এবং ফুসকুড়ি হতে পারে।
শুষ্ক ত্বক:কিডনি সুস্থ না থাকলে তার প্রভাব ফুটে ওঠে ত্বকে। শরীর থেকে দূষিত পদার্থ বার করার পাশাপাশি রক্তে পর্যাপ্ত পরিমাণে লোহিত কণিকা উৎপাদন করা, বিভিন্ন খনিজের ভারসাম্য বজায় রাখা, হাড়ের স্বাস্থ্য— সবই নির্ভর করে কিডনির উপর। রক্তে বিভিন্ন উপাদান সঠিক মাত্রায় না থাকলে, ত্বক শুষ্ক হয়ে পড়ে।
চোখের ফোলা ভাব:পর্যাপ্ত ঘুমোনোর পরেও যদি চোখের তলায় ফোলা ভাব না কমে, তা হলে বুঝতে হবে কিডনির কার্যকারিতায় কোন সমস্যা হচ্ছে। রক্ত থেকে পুষ্টিকর পদার্থ ছেঁকে দূষিত পদার্থ বের করতে পারছে না কিডনি। ফলে রক্তের মধ্যে থাকা প্রোটিন মিশে যাচ্ছে মূত্রের মধ্যে। যার ফলস্বরূপ চোখের চারপাশে এক ধরনের ফোলা ভাব দেখা দিতে পারে।
আরো পড়ুন:মাইগ্রেনের কারণ ,মাইগ্রেন হলে করণীয় কি?বিস্তারিত জেনে নিন
কিডনি ব্যর্থতার প্রতিকার:
চিকিৎসকের পরামর্শ ছাড়া কোনো প্রকার ব্যথার বা এন্টিবায়েটিক ঔষুধ খাওয়া যাবে না।
- কিডনী রোগের ক্ষেত্রে আমাদের কে অবশ্যয় ডায়াবেটিস ও উচ্চ রক্তচাপ অবশ্যই নিয়ন্ত্রণে রাখতে হবে।
- কিডনী তে পাথর যাতে ব্লক করতে না পারে এজন্য চিকিৎসা নিতে হবে।
- প্রোস্টেট ব্লক থাকলে সেটি দূর করতে হবে।
- ডায়রিয়া ও বমি হলে সঙ্গে সঙ্গে চিকিৎসা নিতে হবে।
- প্রস্রাব কমে গেলে সঙ্গে সঙ্গে চিকিৎসকের কাছে যাওয়া। এতে ৯০-৯৫ ভাগ স্বাভাবিক অবস্থায় চলে আসে। তবে এক দুই সপ্তাহ চলে গেলে আর স্বাভাবিক পর্যায়ে আসে না।
- প্রস্রাবকালীন জটিলতা পরিহার করতে হবে। গ্রাম্য দায়ী, অদক্ষদের দিয়ে সন্তান প্রস্রাব করানো যাবে না।
- প্রস্রাবের ইনফেকশন যখন রক্তে ছড়ায় তখন এটি কিডনিকে খারাপ করে দেয়। এজন্য ইনফেকশন নিয়ন্ত্রণ করতে হবে।
- রুটিন চেক আপ করতে হবে করতে হবে।.
- লক্ষন দেখা মাত্র আমাদের কে দ্রুত ব্যবস্থা নিতে হবে।
- নেফ্রাইটিস থাকলে চিকিৎসা গ্রহন করতে হবে।সোডিয়াম, ফসফরাস এবং পটাসিয়াম কম একটি কিডনি-বান্ধব খাদ্য গ্রহণ করা কিডনির কাজের চাপ কমাতে সাহায্য করতে পারে। এর মধ্যে প্রক্রিয়াজাত খাবার, লাল মাংস, দুগ্ধজাত পণ্য এবং কিছু ফল ও সবজি সীমিত করা জড়িত থাকতে পারে।তরল গ্রহণ সীমিত করা, বিশেষ করে কিডনি ব্যর্থতার উন্নত পর্যায়ে, তরল ওভারলোড এবং ফোলা প্রতিরোধে সহায়তা করে।
- উন্নত কিডনি ব্যর্থতার ক্ষেত্রে যেখানে কিডনি পর্যাপ্তভাবে রক্ত থেকে বর্জ্য পদার্থ ফিল্টার করতে পারে না, ডায়ালাইসিস প্রয়োজন হতে পারে। হেমোডায়ালাইসিস এবং পেরিটোনিয়াল ডায়ালাইসিস হল দুটি প্রাথমিক ধরণের ডায়ালাইসিস যা শরীর থেকে বর্জ্য এবং অতিরিক্ত তরল অপসারণ করতে ব্যবহৃত হয়।
- শেষ পর্যায়ের কিডনি ব্যর্থতায় আক্রান্ত ব্যক্তিদের জন্য, একটি কিডনি প্রতিস্থাপন দীর্ঘমেয়াদী বেঁচে থাকার এবং উন্নত জীবনের মানের জন্য সেরা সুযোগ দিতে পারে। ব্যর্থ কিডনি প্রতিস্থাপন করার জন্য একটি সামঞ্জস্যপূর্ণ দাতার একটি সুস্থ কিডনি অস্ত্রোপচারের মাধ্যমে স্থাপন করা হয়।
- নিয়মিত ব্যায়াম, ওজন ব্যবস্থাপনা এবং ধূমপান ত্যাগ সহ জীবনধারা পরিবর্তনের মাধ্যমে ডায়াবেটিস এবং উচ্চ রক্তচাপের মতো অন্তর্নিহিত স্বাস্থ্য পরিস্থিতি পরিচালনা করা কিডনির আরও ক্ষতি প্রতিরোধে সাহায্য করতে পারে।
কিডনী কে সুস্থ রাখার খাবার সমূহ:
কিডনীর স্বাস্থ্যকে বৃদ্ধি করতে এবং কিডনীর অসুস্থতা প্রতিরোধ করতে নিম্নলিখিত খাবার সমূহ ভালো হতে পারে ।আসুন জেনে নেই যেসব খাবার খেলে কিডনি ভালো থাকে।
পানি : কিডনি পরিষ্কার এবং ডিটক্সিফাই করতে পানি সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। এ কারণে নিয়মিত পর্যাপ্ত পানি পানের পরামর্শ দেন বিশেষজ্ঞরা।
চর্বিযুক্ত মাছ :২০০৮ সালে প্রকাশিত আমেরিকান জার্নাল অব কিডনি ডিজিসের মতে, মাছ দেহে প্রোটিনের চাহিদা পূরণ করে। মাছে প্রচুর পরিমাণ ওমেগা থ্রি ফ্যাটি অ্যাসিড আছে যা ইনফ্লামেশন হ্রাস করে এবং কিডনি সুস্থ রাখে।
চেরি ফল:চেরিতে থাকা ভিটামিন সি, ভিটামিন কে, ফলেট, ভিটামিন বি৬ ও ম্যাগনেসিয়াম শরীরে প্রবেশ করার পর কিডনি ফাংশানের মারাত্মক উন্নতি ঘটায়।
পেঁয়াজ ও রসুন : কিডনির ক্ষমতা বাড়াতে এই দুটি সবজি বিশেষ ভূমিকা পালন করে থাকে। আসলে পিঁয়াজ এবং রসুনের মধ্যে কুয়েরসেটিন নামক একটি উপাদান থাকে, যা কিডনিকে নানাবিধ ক্ষতিকর উপাদানের হাত থেকে রক্ষা করে।
আরো পড়ুন:হাড় ক্ষয়ের কারণ ও লক্ষণ এবং হাড় ক্ষয়ের প্রতিরোধের উপায় সম্পর্কে বিস্তারিত জেনে নিন।
দারুচিনি : রক্তে শর্করার মাত্রা যাতে কোনোভাবে বৃদ্ধি না পায় সেদিকে খেয়াল রাখে এই প্রকৃতিক উপাদানটি। সেই সঙ্গে কিডনি ফাংশনারেও উন্নতি ঘটায়।
শসা : শসাতে পানির পরিমাণ বেশি থাকে। খাদ্যতালিকায় শসা যোগ করলে শরীর সতেজ ও হাইড্রেট থাকবে । তাছাড়া, শসার মধ্যে মূত্রবর্ধক একটা প্রভাব রয়েছে, যা কিডনিতে পাথর প্রতিরোধে এবং কিডনি ভালোভাবে কাজ করতে সাহায্য করে।
পালং শাক: সবুজ শাকসবজিতে ভিটামিন এ, সি, কে, আয়রন, ম্যাগনেসিয়াম এবং ফোলেট-এর মাত্রা বেশি থাকে। পালং শাকে থাকা বিটা ক্যারোটিন, রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়িয়ে তুলতে সহায়তা করে। এছাড়া ডায়েটে পালং শাক রাখলে তা কিডনি সুস্থ রাখতেও সহায়তা করে।
ফুলকপি:ফোলেট ও খাদ্য আঁশের বড় উৎস ফুলকপি। এটি কিডনির স্বাস্থ্য ভালো রাখতে সহায়তা করে। এতে রয়েছে উচ্চমাত্রায় ভিটামিন সি, যা রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায় এবং ইউরিনারি সিস্টেম ভালো রাখতে সহায়তা করে।
ফল ও সবজি: কিডনীর স্বাস্থ্যের জন্য পর্যাপ্ত প্রচুর ফল ও সবজি খেতে হবে। সেগুলির মধ্যে শাকসবজি, টমেটো, লাউ পটল, ব্রোকলি, স্পিনাচ, ফলতাহল, আম, কমলা, পেঁপে, আপেল, করলা, আঙুর ইত্যাদি অত্যন্ত গুণকারী।
অলিভ অয়েল:অলিভ অয়েলে রয়েছে অলিক অ্যাসিড, যা কিডনির কর্মক্ষমতায় বেশ কার্যকর। অলিভ অয়েলে রয়েছে মনো-স্যাচুরেটেড ফ্যাট, যা অক্সিডেশনের হাত থেকে সুরক্ষা দেয়। তা ছাড়া ক্যানসার ও ডায়াবেটিসের ঝুঁকি কমায় অলিভ অয়েল।
লেবুর শরবত:লেবুর শরবতে থাকা ভিটামিন সি এবং সাইট্রিক এসিড অভ্যন্তরীণ পিএইচ নিয়ন্ত্রণ করে সুস্বাস্থ্য বজায় রাখা ও রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করতে সাহায্য করে। কিডনির সমস্যা সমাধানের ক্ষমতা রয়েছে এতে। এজন্য সকালে বা দুপুরে খাওয়ার আগে লেবুর শরবত পান করা যেতে পারে।
ডিমের সাদা অংশ: ডিমের সাদা অংশে প্রচুর পরিমাণে প্রোটিন আছে। এতে প্রচুর পরিমাণে ফসফরাস এবং অ্যামিনো এসিড আছে যা কিডনি রোগ প্রতিরোধ করে কিডনিকে সুস্থ রাখে। ডিম সিদ্ধ করে বা অমলেট করে খেতে পারেন। তবে হ্যাঁ, ডিমের সাদা অংশ শুধু।
আদা:আদা দেহের রক্ত চলাচল বাড়িয়ে কিডনিকে সচল রাখতে সাহায্য করে, ফলে কিডনির কার্যকারিতা বেড়ে যায়।
আনারস: শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে সাহায্য করে আনারস। এতে প্রচুর ফাইবার থাকে। যা কিডনির রোগ প্রতিরোধে সহায়ক। এছাড়া এতে ম্যাঙ্গানিজ, ভিটামিন-সি এবং ব্রোমেলিন থাকায় প্রদাহ জনিত সমস্যা হ্রাস করতেও সহায়তা করে।
কিডনী রোগীদের যেসব খাবার এড়িয়ে চল উচিৎ:
কিডনি রোগীদের জন্য উপযুক্ত খাবার সমূহের মাধ্যমে তাদের স্বাস্থ্য বরাদ্দ করা যায়। নিম্নলিখিত খাবার এড়িয়ে চলা কিডনিরোগীদের জন্য উচিত:
- কিডনী রোগ থেকে বাঁচতে হলে আমাদের কে আচার, চিপস, শুঁটকি, সল্টেড বিস্কুট, মুড়ি, চানাচুর, সয়াসসে অতিরিক্ত লবণ থাকে। এসব খাবার খাদ্যতালিকা থেকে বাদ দিতে হবে।
- কিডনী রোগ থেকে বাঁচতে আমাদের কে মাটির নিচের শাকসবজি, যেমন: আলু, কচু, মিষ্টি আলু খাওয়া যাবে না। পুঁইশাক, পালংশাক, সব ধরনের ডাল, কাঁঠালের বিচি, শিমের বিচিও বাদ দিতে হবে। তা না হলে ইউরিক অ্যাসিডের মাত্রা বেড়ে যাবে।
- কিডনি রোগ থেকে বাঁচতে আমাদের কে সব ধরনের কোমল পানীয় বাদ দিতে হবে।
- কিডনি রোগ থেকে বাঁচতে আমাদের ঘি, মাখন, ডালডা, পনির, নারকেল তেল খাওয়া যাবে না।
- ডাব, কলা, আঙুর একেবারেই খাবেন না, কেননা, এতে পটাশিয়ামের পরিমাণ বেশি। কিডনি রোগীদের রক্তে পটাশিয়ামের মাত্রা বাড়তে থাকে।
- ঘন ডাল খাওয়া যাবে না। তবে ডালের পানি খেতে পারবেন।
- তেলেভাজা খাবার যেমন পিয়াজু, বেগুনি খাওয়া উচিত নয়।
উপসংহার:
প্রিয় পাঠক আশা করছি আপনারা উপরের কারণগুলি বোঝার মাধ্যমে, লক্ষণগুলি সনাক্ত করে এবং উপযুক্ত প্রতিকারের উপায় সম্পর্কে জেনে উপকৃত হয়েছেন। আপনাদের কাছে আমাদের এই আর্টিকেল টি যদি ভালো লেগে থাকে তাহলে অবশ্যয় কমেন্ট করে জানাবেন,এবং আপনার বন্ধুদের সঙ্গে শেয়ার করবেন ধন্যবাদ।আসসালামু আলাইকুম।
অর্ডিনারি আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url