ভিটামিন ই এর অভাবে কি কি হয় এবং ভিটামিন ই এর উপকারিতা ও অপকারিতা জেনে নিন।

ভূমিকা:

প্রিয় পাঠক আসসালামুআলাইকুম আশা করছি আপনারা ভালো আছেন,আজ আমি আপনাদের কে আমাদের শরীরে ভিটামিন ই এর অভাবজনিত লক্ষণ,ভিটামিন ই এর উপকারিতা ও অপকারিতা সম্পর্কে আলোচনা করবো ।আপনারা যদি শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত আমাদের এই আর্টিকেলের সঙ্গে থাকেন। 
ভিটামিনি ই সম্পর্কে বিস্তারিতভাবে জেনে নিন

তাহলে আপনারা আরো জানতে পারবেন ভিটামিন ই এর উৎস কি?,ভিটামিন ই সমৃদ্ধ খাবার কোন গুলো, শরীরে ভিটামিন ই এর ঘাড়তি হলে কি কি রোগ হয়, আমাদের দেহে ভিটামিন ই কিভাবে কাজ করে, গর্বাবস্থায় ভিটামিন ই খাবার উপকারিতা কি? এবং ভিটামিন ই খাবার সঠিক নিয়ম কি?সহ বিস্তারিত। 

শরীরে ভিটামিন ই এর অভাবজনিত লক্ষণ:

শরীরে ভিটামিন ই এর অভাবে কিকি লক্ষণ দেখা দেয় তার নিম্নরূপঃস্নায়ুর সমস্যা, পেশী দুর্বলতা, পেশী এসাড় হয়ে আসা, পেশির মধ্যে ভারসাম্য না থাকা, ঠিক করে হাঁটতে না পারাঘন ঘন সর্দি, কাশি, প্রায়শই জ্বর, শরীরের বিভিন্ন অংশে ব্যথা অর্থাৎ শরীরে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কমে যাওয়া রেটিনায় সমস্যা যার ফলে দৃষ্টিশক্তি দুর্বল হয়ে যাওয়া

ভিটামিন ই এর উৎস:

ভিটামিন-ই এর উৎস হিসেবে আপনি বাদাম, চিনাবাদাম, আখরোট, অ্যাভোকাডো, সূর্যমুখী তেল, সয়াবিন তেল, স্যালমন মাছ, ডিম ইত্যাদি খাতে পারেন। এছাড়াও, আপনি ভিটামিন-ই এর সম্পূরক হিসেবে ক্যাপসুল বা ট্যাবলেট ব্যবহার করতে পারেন, কিন্তু এর আগে অবশ্যই ডাক্তারের সাথে পরামর্শ করে নিন।
ভিটামিন ই একটি গুরুত্বপূর্ণ অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট যা শরীরের বিভিন্ন কার্যক্রমে সাহায্য করে।

ভিটামিন ই এর উপকারিতা ও অপকারিতা: 

উপকারিতা:

ভিটামিন-ই একটি ফ্যাট দ্রবীভূত ভিটামিন যা শরীরের কোষগুলির সুরক্ষা ও স্বাস্থ্যের জন্য খুব গুরুত্বপূর্ণ। ভিটামিন-ই এর কিছু উপকারিতা হলো:ত্বকের আর্দ্রতা বজায় রেখে ত্বককে শীতল ও প্রাকৃতিক রাখে।
চুলের প্রাকৃতিক তেলগুলি বজায় রেখে চুলকে লম্বা, ঘন ও উজ্জ্বল করে তোলে।দৃষ্টিশক্তি উন্নত করে এবং বার্ধক্য-জনিত চক্ষু সমস্যা যেমন ছানি ও ম্যাকুলার ক্ষয় প্রতিরোধ করে।হৃদরোগ, ক্যান্সার, ডিমেনশিয়া ও অন্যান্য রোগের ঝুঁকি কমায়।শরীরের প্রতিরক্ষা ব্যবস্থাকে উদীপ্ত করে ভাইরাস, ব্যাকটেরিয়া ও অন্যান্য প্যাথোজেনের বিরুদ্ধে লড়াই করে।

 অপকারিতা: 

ভিটামিন ই প্রয়োজনের চেয়ে বেশি সেবন করলে কিছু ক্ষতিকর পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া হতে পারে। এই পার্শ্বপ্রতিক্রিয়াগুলি হলো:

রক্তচাপ বাড়ানো: ভিটামিন ই রক্তের শক্তিশালী ক্লটিং ক্ষমতা কমিয়ে দিতে পারে, যা রক্তচাপ বাড়ানোর ঝুঁকি তৈরি করে।

ডায়রিয়া বা পেটের ব্যথা: ভিটামিন ই পাচনতন্ত্রের সমস্যা সৃষ্টি করতে পারে, যা ডায়রিয়া, পেটের ব্যথা, বমি বা গ্যাসের মতো লক্ষণ দেখাতে পারে।

শ্বাসকষ্ট বা অ্যালার্জি: ভিটামিন ই কিছু মানুষের ক্ষেত্রে অ্যালার্জিক প্রতিক্রিয়া উত্পন্ন করতে পারে, যা শ্বাসকষ্ট, চোখের লাল, চুলকানি, চামড়ার উজল বা অন্যান্য লক্ষণ দেখাতে পারে।ভিটামিন ই সেবনের আগে ডাক্তারের সাথে পরামর্শ করা উচিত। 

ভিটামিন ই সমৃদ্ধ খাবার: 

ভিটামিন ই সমৃদ্ধ খাবার সমুহ হলো:

সূর্যমুখীর বীজ: এক কাপ সূর্যমুখীর বীজে 82% ভিটামিন ই রয়েছে। এটি একটি উত্কৃষ্ট অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট যা শরীরের ক্ষতিকর মুক্ত রাসায়নিক পদার্থগুলির সঙ্গে যুদ্ধ করে।কাঠ বাদাম: এক কাপ কাঠ বাদামে 181% ভিটামিন ই রয়েছে। এটি হৃদরোগ, ক্যান্সার, ডায়বেটিস, আলজাইমার ও অন্যান্য রোগের ঝুঁকি কমাতে সহায়তা করে।

চীনা বাদাম: এক কাপ চীনা বাদামে 111% ভিটামিন ই রয়েছে। এটি রক্তচাপ, কোলেস্টেরল, ওজন নিয়ন্ত্রণ ও মানসিক স্বাস্থ্যের জন্য উপকারী।

অ্যাভোকাডো: একটি অ্যাভোকাডোতে 28% ভিটামিন ই রয়েছে। এটি একটি সুস্বাদু ও পুষ্টিকর ফল যা ত্বক, চুল, চোখ, হৃদযন্ত্র ও পাচনতন্ত্রের জন্য ভালো।

মাছ: বিভিন্ন ধরনের মাছে ভিটামিন ই রয়েছে, যেমন স্যালমন, ট্রাউট, হিলসা, রুই, কাতলা, ইলিশ ইত্যাদি। মাছে রয়েছে অমেগা-৩ ফ্যাটি এসিড যা হৃদরোগ, স্ট্রোক, ডায়বেটিস, ক্যান্সার, আর্থ্রাইটিস, ডিপ্রেশন ও অন্যান্য রোগের ঝুঁকি কমাতে সহায়তা করে। ভিটামিন ই একটি গুরুত্বপূর্ণ অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট যা শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা, ত্বকের স্বাস্থ্য, রক্তক্ষরণ ও প্রজননে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে।

ভিটামিন ই এর ঘাড়তি হলে কিকি রোগ হয়: 

ভিটামিন ই এর ঘাটতি হলে বিভিন্ন রোগ ও সমস্যা হতে পারে, যেমন:

হৃদরোগ: ভিটামিন ই রক্তের শক্তিশালী ক্লটিং ক্ষমতা কমিয়ে দিতে পারে, যা হৃদরোগ, হার্ট অ্যাটাক বা স্ট্রোকের ঝুঁকি বাড়াতে পারে।

পাচনতন্ত্রের সমস্যা: ভিটামিন ই পাচনতন্রের সমস্যা সৃষ্টি করতে পারে, যা ডায়রিয়া, পেটের ব্যথা, বমি বা গ্যাসের মতো লক্ষণ দেখাতে পারে।

অ্যালার্জি: ভিটামিন ই কিছু মানুষের ক্ষেত্রে অ্যালার্জিক প্রতিক্রিয়া উত্পন্ন করতে পারে, যা শ্বাসকষ্ট, চোখের লাল, চুলকানি, চামড়ার উজল বা অন্যান্য লক্ষণ দেখাতে পারে।

প্রজননতন্ত্রের সমস্যা:ভিটামিন ই এর ঘাটতি পুরুষের ক্ষেত্রে নাম্বার কমে যেতে পারে, যা নির্বাচনশীল বন্ধ্যাত্বের কারণ হতে পারে। মহিলাদের ক্ষেত্রে ভিটামিন ই এর ঘাটতি গর্ভধারণের সমস্যা, গর্ভপাত, গর্ভকালীন উচ্চ রক্তচাপ বা প্রীক্লাম্পসিয়া, শিশুর জন্মের সময় কম ওজন বা শিশুর মৃত্যুর ঝুঁকি বাড়াতে পারে।
ভিটামিন ই ক্যাপসুল একটি চর্বিযুক্ত দ্রবণীয় ভিটামিন যা শরীরের বিভিন্ন কার্যকারিতা উন্নত করতে সাহায্য করে। 

ভিটামিন ই ক্যাপসুলের কার্যকারিতা:

ভিটামিন ই ক্যাপসুলের কার্যকারিতা নিম্নে আলোচনা করা হলো:অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট হিসেবে কাজ করে এবং মুক্ত রাসায়নিক পদার্থগুলির সঙ্গে যুদ্ধ করে।হৃদরোগ, স্ট্রোক, ক্যান্সার, ডায়বেটিস ও অন্যান্য রোগের ঝুঁকি কমাতে সহায়তা করে।ত্বকের স্বাস্থ্য, যৌবন, রক্তচাপ, রক্তক্ষরণ ও প্রজননের জন্য ভালো।ইমিউন সিস্টেমকে শক্ত করে এবং রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়।
পুরুষের ক্ষেত্রে নাম্বার বাড়াতে এবং মহিলাদের ক্ষেত্রে গর্ভধারণের সমস্যা কমাতে সহায়ক।ভিটামিন ই ক্যাপসুল সেবনের আগে ডাক্তারের সাথে পরামর্শ করা উচিত। ভিটামিন ই একটি ফ্যাট দ্রবীভূত ভিটামিন যা একটি শক্তিশালী অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট হিসেবে কাজ করে। এটি আমাদের শরীরের কোষগুলি ক্ষতি থেকে রক্ষা করে এবং ত্বক, চুল, চোখ, হৃদযন্ত্র এবং প্রতিরক্ষা ব্যবস্থার স্বাস্থ্য উন্নত করে।
ভিটামিন ই প্রাকৃতিকভাবে অনেক খাদ্য বস্তুতে পাওয়া যায়, যেমন বাদাম, চিনাবাদাম, আখরোট, সয়াবিন, অ্যাভোকাডো, সবুজ শাক-সবজি, উদ্ভিজ্জ তেল ইত্যাদি। একজন পূর্ণবয়স্ক সুস্থ মানুষের প্রতি দিন ৭.৫ থেকে ১০ মিলিগ্রাম ভিটামিন ই প্রয়োজন হয়।
ভিটামিন ই মুখে মাখলে ত্বকের উপকার হতে পারে, যেমন ত্বকের আর্দ্রতা বাড়ানো, ব্রণ ও দাগ দূর করা, বলিরেখা ও বয়সের ছাপ কমানো, ত্বকের উজ্জ্বলতা বাড়ানো ইত্যাদি। কিন্তু এই উপকার পেতে হলে ভিটামিন ই ক্যাপসুল ভেঙ্গে তার তরল অংশ মুখে মাখতে হবে না, বরং মুখের উপর লাগাতে হবে। এছাড়া ভিটামিন ই ক্যাপসুল মুখে লাগানোর আগে ডাক্তারের পরামর্শ নিতে হবে।

গর্বাবস্থায় ভিটামিন ই খাওয়ার উপকারিতা:

গর্বাবস্থায় ভিটামিন ই খাওয়া উপকারিতা অনেক এটি মা ও শিশুর জন্য উপকারী হতে পারে। ভিটামিন ই গর্ববতী ময়ের শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়, ত্বক ও চুলের স্বাস্থ্য উন্নত করে, রক্তচাপ ও ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করে, প্রসবের সময় রক্তক্ষরণ কমায় এবং শিশুর মস্তিষ্কের বিকাশে ভূমিকা রাখে।
গর্বাবস্থায় ভিটামিন ই এর প্রয়োজনীয় মাত্রা প্রতিদিন ১৫ মিলিগ্রাম বা ২২.৪ আইইউ। এই মাত্রা প্রায় সব সময় স্বাভাবিক খাদ্যের মাধ্যমে পূরণ করা যায়। ভিটামিন ই পাওয়া যায় চিনাবাদাম, আখরোট, বাদাম, উদ্ভিজ তেল, কুসুম, গম, সয়াবিন, সূর্যমুখী, সবুজ শাকসবজি, ডিম, স্যালমন মাছ, চর্বিবিহীন মাছ ইত্যাদি।
তবে, যদি আপনার শরীরে ভিটামিন ই এর অভাব হয় বা আপনার ডাক্তার আপনাকে ভিটামিন ই সাপ্লিমেন্ট গ্রহণের পরামর্শ দেয়, তাহলে আপনি নির্দিষ্ট মাত্রায় ভিটামিন ই ক্যাপসুল বা ট্যাবলেট খেতে পারেন।
কিন্তু অতিরিক্ত পরিমাণে ভিটামিন ই গ্রহণ করা উচিত নয়, কারণ এটি কিছু পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া ঘটাতে পারে, যেমন মুখে লাল দানা, চুলকানি, বমি, পেট ব্যথা, চোখে জ্বালা, মাথা ব্যথা, ক্লান্তি, অস্বস্তি ইত্যাদি।

ভিটামিন ই ক্যাপসুল খাওয়ার নিয়ম:

ভিটামিন ই ক্যাপসুল খাওয়ার নিয়মগুলোর নিম্নরূপঃভিটামিন ই ক্যাপসুল খাবারের সাথে বা খাবারের পরে সেবন করা উচিত। খালি পেটে এটি খাওয়া উচিত নয়, কারণ এটি তেলে দ্রাব্য হওয়ায় তেলের সাথে ভালো ভাবে মিশে যায়।ভিটামিন ই ক্যাপসুল খাওয়ার পরিমাণ বয়স ও শারীরিক অবস্থার উপর নির্ভর করে। 
প্রাপ্তবয়স্ক ব্যক্তিরা প্রতিদিন ২০০ থেকে ৪০০ মিলিগ্রাম ভিটামিন ই সেবন করতে পারেন। তবে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের পরামর্শ ছাড়া এটি খাওয়া উচিত নয়, কারণ এটির অতিরিক্ত সেবন ক্ষতিকর হতে পারে।ভিটামিন ই ক্যাপসুল খাওয়ার সময় ক্যাপসুলটি কেটে না ফেলে পুরোটাই নিলে ভালো।
ক্যাপসুলের ভিতরের তরলটি খাবারের সাথে মিশিয়ে নিলে ভালো হয় না, কারণ এটি তাপে উড়ে যায় এবং কার্যকারিতা কমে যায়।

শেষ কথা:

প্রিয় পাঠক আশা করছি আপনারা উপরিক্ত বিষয়গুলো থেকে ভিটামিন ই সম্পর্কে বিস্তারিত জেনে গেছেন।আপনাদের যদি ভিটামিন ই সম্পর্কে আরো কিছু জানার থাকে এবং আপনাদের কাছে যদি আমাদের এই আর্টিকেল টি ভালো লেগে থাকে তাহলে আবশ্যই কমেন্ট করে জানাবেন এবং আপনার প্রিয়জনদের সঙ্গে শেয়ার করবেন।ধন্যবাদ আসসালামু আলাইকুম।

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

অর্ডিনারি আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url