মাইগ্রেনের কারণ ,মাইগ্রেন হলে করণীয় কি?বিস্তারিত জেনে নিন

প্রিয় পাঠক আসসালামু আলাইকুম আশা করছি আপনারা ভালো আছেন।আজ আমি আপনাদের আমাদের মাথার একটি গুরুত্বর সমস্য মাইগ্রেন ব্যাথা সম্পর্কে আলোচনা করবো।মাইগ্রেনের ব্যাথা আমাদের মাথার এমন একটি সমস্যা যা আমাদের মাথার এক পাশ থেকে শুরু করে পুরো মাথা জুড়ে এই সমস্যা দেখা দিতে পারে।
মাইগ্রেন সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্য জেনে নিন ।

তাই আপনারা যদি আপনাদের মূল্যবান কিছু সময় নষ্ট করে আমাদের এই আটিৃকেলের সঙ্গে থাকেন তাহলে আপনারা জানতে পারবেন মাইগ্রেন কি?মাইগ্রেনের কারণ কি?,মাইগ্রেন হলে করণীয় কি?সহ মাইগ্রেন দূর করার ঘরোয়া উপায়,গর্বাবস্থায় মাইগ্রেনের ঘরোয়া উপায়, মাইগ্রেন প্রতিরোধের খাবার সমূহ,মাইগ্রেন হলে আমাদের শরীরে কি কি ক্ষতি হতে পারে সে বিষয়গুলো সম্পর্কে নিদিষ্ট কিছু ধারনা দেয়ার চেস্টা করবো। 

ভূমিকা:

মাইগ্রনের ব্যাথায় ভোগেন এমন মানুষের সংখ্যা আমাদের আশেপাশে খুব একটা কম না ।আবার অনেকের মনে প্রশ্ন জাগে মাইগ্রেনের ব্যাথা কেন হয় ?এবংকি কারণে হয়? মাইগ্রেনের ব্যাথার প্রকৃত কারণ এখনো আমরা পুরপুরি জানতে পারি নাই।
তবে ধারণা করা হয় জেনেটিক এবং কিছু এনভায়রনমেন্টাল ফ্যাক্টর  মাইগ্রেনের ব্যাথার জন্য অনেক টা দায়ি হতে পারে।তাই এই আর্টিকেলের মাধ্যমে মাইগ্রেনের ব্যাথার কারণ, প্রতিকার সহ আরো কিছু বিষয় নিয়ে আলোচনা করবো।

মাইগ্রেন কি?

মাইগ্রেন হল এক বিশেষ ধরনের মাথা ব্যাথা।মাইগ্রেন শব্দটি গ্রীক শব্দ হেমিক্রেনিয়া শব্দ থেকে এসেছে। হেমি শব্দের অর্থ হলো অর্ধেক আর ক্রেনিয়া শব্দের অর্থ হল মাথার খুলি।এই ব্যাথা অর্ধেক মাথায় হয় বলে আমরা অনেকে একে অর্ধ কপালি বলে থাকি।কিন্ত এই ব্যাথা অনেক সময় মাথার পুরো পাশ জুড়ে হয়ে থাকতে পারে।
যাদের মধ্যে মাইগ্রেন হবার প্রবণতা দেখা দেয় তারা কোন প্রকার আলো,শব্দ,গন্ধ কোণ কিছু সহ্য করতে পারেনা।মাইগ্রেনের ব্যাথা শুরু হবার সাথে সাথে বমি বমি ভাব হয় এবং অনেক সময় বমি ও হতে পরে।

মাইগ্রেনের কারণ:  

মাইগ্রেন হলো এক প্রকারের মাথাব্যথা যা মাথার একদিকে শুরু হয় এবং অনেক সময় এই ব্যাথা তীব্র হয়ে যায়। এটি মস্তিষ্কের রক্তশিরার স্ফীতি ও সংকোচনের ফলে ঘটে। মাইগ্রেনের সঙ্গে  বমি বমি ভাব, চোখে আলো দেখা, শব্দের অসহ্য হওয়া ইত্যাদি উপসর্গ হতে পারে। মাইগ্রেনের কারণ সম্পর্কে এখনো সম্পূর্ণ তথ্য জানা নেই, তবে কিছু পরিবেশগত ও জেনেটিক কারনে এর প্রভাব হয়ে থাকতেপারে। মাইগ্রেনের কিছু সাধারণ কারণ হলো:
  • স্ট্রেস 
  • চাপপেট খালি রাখা 
  • প্রক্রিয়াজাত খাবার ও পানীয়
  • আবহাওয়া
  • অতিরিক্ত শব্দ 
  • কড়া গন্ধ
  • অতিরিক্ত ও অনিয়ন্ত্রিত ঘুম
  • অতিরিক্ত ওষুধ খেলে
  • অতিরিক্ত মিষ্টি খাবারের কারণে
এছাড়াও কিছু মানুষের মাইগ্রেনের ট্রিগার হতে পারে নিম্নলিখিত কারণগুলি:
  • হরমোনের পরিবর্তন, যেমন মাসিক চক্র, গর্ভাবস্থা, মেনোপজ
  • কিছু খাবার বা পানীয়, যেমন চিজ, চকলেট, ক্যাফিন, এলকোহল, মোনোসোডিয়াম গ্লুটামেট (MSG)
  • কিছু রোগ বা অসুস্থতা, যেমন ঠান্ডা, সাইনাসাইটিস, দন্তশূল, নেক বা পিঠের ব্যথা
  • কিছু ওষুধ বা চিকিৎসা, যেমন বার্থ কন্ট্রোল পিল, নাইট্রেট, এরগোটামিনমাইগ্রেনের কারণে

 মাইগ্রেন হলে করণীয় কি? :

মাইগ্রেনের প্রতিকারের জন্য কিছু সাধারণ পদক্ষেপ নিম্নে আলোচনা করা হলো:
  • একটি শান্ত এবং অন্ধকার ঘরে বিশ্রাম করার চেষ্টা করুন এবং আপনার শরীরকে শিথিল করুন।
  • ব্যথা কমাতে আপনার কপাল বা ঘাড়ে একটি ঠান্ডা বা উষ্ণ কম্প্রেস প্রয়োগ করুন।
  • ব্যথা উপশম করার জন্য ওষুধ গ্রহণ করুন, যেমন প্যারাসিটামল, আইবুপ্রোফেন, ন্যাপ্রোক্সেন বা সামিগ্রেন। তবে, ওষুধ গ্রহণের আগে চিকিৎসকের পরামর্শ নিন।
মাইগ্রেনের ট্রিগার চিহ্নিত করুন এবং এড়িয়ে চলুন। একটি ডায়েরিতে আপনার উপসর্গের প্যাটার্নগুলি ট্র্যাক করে রাখুন যাতে আপনি তাদের কারণ কী তা বুঝতে পারেন।
  • মানসিক চাপ নিয়ন্ত্রণ করার চেষ্টা করুন।
  • প্রতিদিন নিয়ম মেনে এবং সময় মত খাওয়ার চেষ্টা করুন।
  • প্রচুর তরল পাণীয় পান করুন। 
  • পর্যাপ্ত বিশ্রাম নিন। 
  • সময়মত ঘুমান এবং ঘুম থেকে উঠুন।
  • নিয়মিত পরিমিত ব্যায়াম করুন।

মাইগ্রেনের ব্যাথা হলে কি ধরনের খাবার খাওয়া উচিৎ :

মাইগ্রেনের ব্যথা প্রতিরোধে কিছু খাবার আপনার মাইগ্রেনের ব্যাথা সরাতে সহায়তা করতে পারে, যেমন ম্যাগনেশিয়ামসমৃদ্ধ খাবার, ফলমূল, শাকসবজি, ক্যালসিয়াম ও ভিটামিন ডি সমৃদ্ধ খাবার।
তবে, কিছু খাবার বা পানীয় মাইগ্রেনের ট্রিগার হতে পারে, যেমন চিজ, চকলেট, ক্যাফিন, এলকোহল, মোনোসোডিয়াম গ্লুটামেট (MSG)। এই ধরনের খাবার বা পানীয় এড়িয়ে চলা উচিত।

মাইগ্রেন দুর করার ঘরোয়া উপায়: 

প্রথমে মাইগ্রেনের চিকিৎসার জন্য ডাক্তারের পরামর্শে মাইগ্রেনের  ব্যথানাশক একটি ঔষধ নিন। ঔষধটি সবসময় কাছে রাখুন।‌ মাইগ্রেনের উপসর্গ শুরু হলে, ঔষধটি গ্রহণ করুন।এতে যদি কাজ না হয় তাহলে কিছু ঘরোয়া উপায় গ্রহন করতে পারেন ।মাইগ্রেন ব্যাথা শুরু হয়ে গেলে ব্যথা কমাতে কপালে আইসপ্যাক ধরে রাখতে পারেন।
মাইগ্রেনের কারণ হতে পারে আলো, শব্দ, গন্ধ, খাবার, মানসিক চাপ, হরমোনাল পরিবর্তন, অসুস্থতা বা অসমতল ঘুম। এই কারণগুলি থেকে যথাসম্ভব দূরে থাকুন।মাইগ্রেনের পুনরাবৃত্তি কমাতে নিয়মিত ঘুমান, সঠিক খাবার খান, পর্যাপ্ত পানি পান করুন, শারীরিক ও মানসিক স্বাস্থ্য রক্ষা করুন, এবং স্ট্রেস মুক্ত থাকতে চেষ্টা করুন।
যদি মাইগ্রেনের ব্যথা বেশি হয় বা অন্য কোনো সমস্যা হয়, তবে ডাক্তারের সাথে যোগাযোগ করুন।আশা করি আপনি শীঘ্রই সুস্থ হবেন।

গর্বাবস্থায় মাইগ্রেনের ঘরোয়া চিকাৎসা: 

গর্বাবস্থায় মাইগ্রেন হলে আপনার কিছু সাবধানতা অবলম্বন করতে হবে। মাইগ্রেন হলে সাধারণ ব্যথানাশক ঔষধ গ্রহণ করা উচিত নয়, কারণ এতে আপনার ও আপনার শিশুর উপর প্রতিকূল প্রভাব পড়তে পারে। আপনি ডাক্তারের পরামর্শে মাইগ্রেনের জন্য নির্দিষ্ট ঔষধ নিতে পারেন, যেমন প্যারাসিটামল বা আইবুপ্রোফেন।
তবে এস্পিরিন বা ন্যারকটিক ঔষধ এড়িয়ে চলবেন।মাইগ্রেনের ব্যথা কমাতে আপনি কিছু ঘরোয়া উপায় অনুসরণ করতে পারেন, যেমন মাথায় ঠান্ডা কাপড় বা আইসপ্যাক রাখুন।আলো ও শব্দ কম এমন একটা শান্ত ও অন্ধকার ঘরে বিশ্রাম করুন।নিয়মিত ঘুমান, সমতল খাবার খাওয়া, পর্যাপ্ত পানি পান করা এবং স্ট্রেস মুক্ত থাকা।
মাইগ্রেনের ট্রিগার হতে পারে এমন কিছু খাবার এড়িয়ে চলবেন, যেমন চকলেট, চা, কফি, চিনাবাদাম, টমেটো, পনির, দই, দুধ, মাখন, আইসক্রিম ইত্যাদি।আদা, জিঞ্জার, লেবু, পুদিনা, কালোজিরা এবং তিল এর রস বা পাউডার দিনে দুবার পানিতে মিশিয়ে খেতে পারেন।যদি মাইগ্রেনের ব্যথা বেশি হয় বা অন্য কোনো সমস্যা হয়, তবে ডাক্তারের সাথে যোগাযোগ করুন।

মাইগ্রেন প্রতিরোধে খাবার সমূহ: 

মাইগ্রেন হল একধরণের মাথাব্যথা যা মাথার এক পাশে বা দুই পাশে হতে পারে। এটি অনেক সময় জ্বলোনি, বমি বমি ভাব, আলো বা শব্দের সহ্য না পারা ইত্যাদি লক্ষণ দিয়ে প্রকাশ করে। মাইগ্রেনের কারণ এবং চিকিৎসা নির্ভর করে ব্যক্তি থেকে ব্যক্তি। তবে কিছু খাবার আছে যা মাইগ্রেনের ব্যথা কমাতে বা প্রতিরোধ করতে সাহায্য করতে পারে। এইসব খাবার হলো-

মাছ: মাছে থাকা ওমেগা-৩ ফ্যাটি এসিড মাইগ্রেনের ব্যথা কমাতে এবং মাথার রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে সহায়তা করে। সামুদ্রিক মাছ যেমন সালমন, টুনা, সার্ডিন ইত্যাদি মাইগ্রেনের জন্য ভালো খাবার।

পানি: পানি শরীরের জলস্তর বজায় রাখে এবং ডিহাইড্রেশনের কারণে হওয়া মাথাব্যথা প্রতিরোধ করে। প্রতিদিন যথেষ্ট পরিমাণে পানি পান করা উচিত।

বাদাম: বাদামে থাকা ম্যাগনেসিয়াম মাইগ্রেনের ব্যথা কমাতে এবং রক্তনালীকে শিথিল করে সহায়তা করে। বাদাম ছাড়াও কাজু, পিস্তা, কিশমিশ ইত্যাদি ড্রাই ফুটস্ মাইগ্রেনের জন্য উপকারী।

সবুজ শাকসবজি: সবুজ শাকসবজি যেমন পালং, লালশাক, ব্রোকলি, কলারড গ্রিনস ইত্যাদি মাইগ্রেনের ব্যথা কমাতে এবং শরীরের অক্সিজেন সরবরাহে সহায়তা করে। এইসব শাকসবজিতে থাকা রিবোফ্লাভিন, ফোলেট, ভিটামিন বি-৬ এবং ভিটামিন সি মাইগ্রেনের প্রতিরোধক হিসেবে কাজ করে।

আদা: আদা একটি প্রাকৃতিক প্রতিবন্ধক যা মাইগ্রেনের ব্যথা কমাতে এবং শরীরের প্রতিশোধন ক্ষমতা বাড়াতে সহায়তা করে। আদা রক্তনালীকে শিথিল করে এবং রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে সহায়তা করে।

যে খাবারে  মাইগ্রেনের ব্যথা বাড়ে:

এছাড়াও কিছু খাবার আছে যা মাইগ্রেনের ব্যথা বাড়াতে বা ট্রিগার করতে পারে। এইসব খাবারগুলো  হলো-
প্রক্রিয়াজাত মাংস: প্রক্রিয়াজাত মাংসে থাকা সোডিয়াম নাইট্রেট এবং নাইট্রাইট মাইগ্রেনের কারণ হতে পারে। তাই হট ডগ, সালামি, সসেজ, বেকন ইত্যাদি খাবার এড়িয়ে চলা উচিত।

পনির:পনিরে থাকা টাইরামাইন রক্তনালীকে প্রসারিত করে মাথাব্যথা বাড়াতে পারে। তাই পনির বা দুগ্ধজাতীয় খাবার এড়িয়ে চলা ভালো।

অ্যালকোহল: অ্যালকোহলে থাকা টাইরামাইন এবং সালফাইট মাইগ্রেনের ব্যথা কে ট্রিগার করতে পারে। তাই রেড ওয়াইন, বিয়ার বা অন্য কোন অ্যালকোহল সেবনের ফলে মাইগ্রেনের ব্যথা বাড়তে পারে।

মাইগ্রেনের শারীরিক ক্ষতি: 

সমূহ মাইগ্রেনের ফলে শরিরের যে মারাত্মক ক্ষতিগুলো হয় তা নিম্নে আলোচনা করা হলো:মাইগ্রেনের ফলে শরীরের হার্ট অ্যাটাকের ঝুকি বাড়তে পারে ।মাইগ্রেনে স্ট্রোকের ঝুকি বাড়ায়।মাইগ্রেনে অন্যান্য সম্পর্কিত মৃত্যুর ঝুকি প্রায় ৫০% বাড়িয়ে দেয়।দেহে রক্ত প্রবাহের হ্রাস করতে পারে।মাইগ্রেনে হৃদরোগের ঝুকি বাড়িয়ে দিতে পারে।
মাইগ্রেনের ফলে মস্তিস্কের ক্ষতি হয়ে যেতে পারে। মাইগ্রেনের ফলে মস্তিস্কে ক্ষতি সাধিত হয় যা পরবত্তীতে মস্তিস্কের ক্ষতি বড় কারণ হতে পারে।

উপসংহার:

প্রিয় পাঠক আশা করছি আপনারা উপরোক্ত আলোচনা থেকে মাইগ্রেনের ব্যাথা সম্পর্কিত কিছু গুরুত্বপূর্ণ তথ্য পেয়ে গেছেন।আপানাদের কাছে আমাদের এই আর্টিকেল টি ভালো লেগে থাকে তাহলে আবশ্যয় কমেন্ট করে জানাবেন এবং বন্ধুদের সঙ্গে শেয়ার করবেন।আপনারা ভালো থাকবেন ধন্যবাদ, আসসালামু আলাইকুম।

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

অর্ডিনারি আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url