হাড় ক্ষয়ের কারণ ও লক্ষণ এবং হাড় ক্ষয়ের প্রতিরোধের উপায় সম্পর্কে বিস্তারিত জেনে নিন।

ভূমিকা:
প্রিয় পাঠক আসলামুআলাইকুম আশা করছি আপনারা ভালো আছেন।আজ আমি আপনাদের কে হাড় ক্ষয় এর কারণ ও লক্ষন এবং হাড় ক্ষয়ের প্রতিরোধের উপায় সম্পর্কে আলোচনা করবো ।আপনারা যদি আপনাদের মূল্যবান সময় নষ্ট করে শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত আমাদের এই আর্টিকেলের সঙ্গে থাকেন।
হাড়ের ক্ষয়রোধের কারণ লক্ষণ ও প্রতিকার

তাহলে আপনারা আরো জানতে পারবেন হাড়ের ক্ষয় প্রতিরোধে খাবার সমূহ সম্পর্কে,মাজার হাড় ক্ষয় হলে করণীয় কি? এবং হাড় ক্ষয় হলো কি ঔষুধ খাওয়া যেতে পারে ,এবং মেরুদন্ডের হাড় ক্ষয়ের কারণ এবঙ লক্ষণ  সে সম্পর্কে।তাহলে চলুন আর দেরী না করে মূল আলোচনায় যাওয়া যাক।

হাড় ক্ষয় এর কারন:

থাইরয়েড এবং প্যারাথাইরয়েড গ্রন্থিজনিত সমস্যা।অপর্যাপ্ত পরিমাণ ক্যালসিয়াম ও ভিটামিন ডি গ্রহণ।হাড়ের গঠন ও ক্ষয়ের স্বাভাবিক ভারসাম্য নষ্ট হওয়া।জেনেটিক বা বংশানুক্রমিক রোগ যেমন- হাড়ের ক্যান্সার ইত্যাদি।নারীদের ক্ষেত্রে ইস্ট্রোজেন এবং পুরুষদের ক্ষেত্রে টেস্টোস্টেরন হরমোনের অভাব।

হাড় ক্ষয়ের এর লক্ষণ: 

এই রোগের লক্ষণ শুরুর দিকে খুব একটা বোঝা না গেলেও ধীরে ধীরে এই রোগের কিছূ লক্ষণ ফুটে উঠে। চলুন তাহলে জেনে নেয়ো যাকেএই রোগের কিছু লক্ষণ সম্পর্কে:
  • কোমরের পিছনে ব্যাথা দেখা দেয়,বিশেষ করে মেরুদন্ডে,নিতম্বে,পাঁজড় কিংবা কবজিতে।
  • ভাঙ্গা কিংবা জোড়া লাগানো মেরুদন্ডে আরো তীব্র হতে পারে।
  • ধীরে ধীরে উচ্চতা কমে যেতে থাকে।
  • কুঁজো হয়ে যায়।
  • পিঠে তীব্র ব্যথা অনুভূত হতে থাকে।
  • মেরুদন্ড হাতের কবজি,কোমরসহ অন্যান্য হাড়ে ফ্র্যাকচার ইত্যাদি দেখা দেয়। 
  • মাংসে ব্যাথা দেখা দেয়।
  • গিঁটে (জোড়ায় জোড়ায় ) ব্যাথা দেখা দেয়।

হাড় ক্ষয় প্রতিরোধের উপায়: 

ক্ষয় প্রতিরোধের জন্য আপনার করণীয় হলো-সুষম খাদ্য গ্রহণ করা।ধূমপান ও মদপান থেকে বিরত থাকা।পর্যাপ্ত পরিমাণ ক্যালসিয়াম ও ভিটামিন ডি সমৃদ্ধ খাবার গ্রহণ।নিয়মিত শরীরচর্চা করা (যেমন- নিয়মিত হাঁটা, সিঁড়ি দিয়ে ওঠা ইত্যাদি)।
প্রাপ্তবয়স্ক মানুষের (১৮-৫০ বছর পর্যন্ত) দৈনিক ১০০০ মিলিগ্রাম ক্যালসিয়াম এবং ৫১ বছর বা তদূর্ধ্বে ১২০০ মিলিগ্রাম ক্যালসিয়াম খাবার থেকে গ্রহণ করা উচিত।ডায়াবেটিস, থাইরয়েড, কিডনি রোগ ইত্যাদি নিয়ন্ত্রণে রাখা।হাড় ভাঙা রোধে বাথরুমের পিচ্ছিল ভাব দূর করা।রাতে ঘরে মৃদু আলো জ্বালিয়ে রাখা।অতিরিক্ত ওজন বহন না করা। 

হাড় ক্ষয় রোধের খাবার সমূহ: 

হাড় ক্ষয় প্রতিরোধের জন্য আপনার করণীয় হলো-সুষম খাদ্য গ্রহণ করা।পর্যাপ্ত পরিমাণ ক্যালসিয়াম ও ভিটামিন ‘ডি’ সমৃদ্ধ খাবার গ্রহণ।নিয়মিত শরীরচর্চা করা (যেমন- নিয়মিত হাঁটা, সিঁড়ি দিয়ে ওঠা ইত্যাদি)।ধূমপান ও মদপান থেকে বিরত থাকা।হাড়ের ক্ষয় বা অস্টিওপোরোসিস একটি সাধারণ সমস্যা, যা বয়সের সাথে সাথে হাড়ের ঘনত্ব ও শক্তি কমে যাওয়ার ফলে ঘটে। 
এই রোগে নারীদের বেশি ভুগতে দেখা যায়, বিশেষ করে মেনোপজের পর। এই রোগ প্রতিরোধে কিছু খাবার গ্রহণ করা উচিত, যেগুলো হাড়ের স্বাস্থ্য ও শক্তি বাড়াতে সাহায্য করে। এই খাবারগুলো হলো-
  • দুধ: দুধ ক্যালসিয়াম ও ভিটামিন-ডি’র উচ্চ উৎস। এই দুটি উপাদান হাড়ের ঘনত্ব ও গঠনে কাজ করে। প্রতিদিন এক কাপ দুধ খেলে হাড়ের ক্ষয় প্রতিরোধ করা যায়।
  • দই: দই ও ক্যালসিয়াম ও ভিটামিন-ডি’র ভালো উৎস। দই হাড়ের শক্তি বাড়াতে সাহায্য করে। প্রতিদিন এক কাপ দই খেলে হাড়ের ক্ষয় প্রতিরোধ করা যায়।
  • কাঠবাদাম: কাঠবাদাম ক্যালসিয়াম, ম্যাগনেসিয়াম, ফসফরাস, পটাশিয়াম, কপার, জিঙ্ক, ভিটামিন-ই ও অমেগা-৩ ফ্যাটি এসিডের উচ্চ উৎস। এই উপাদানগুলো হাড়ের স্বাস্থ্য ও শক্তি বাড়াতে সাহায্য করে। প্রতিদিন আধা কাপ কাঠবাদাম খেলে হাড়ের ক্ষয় প্রতিরোধ করা যায়।
  • ব্রকলি: ব্রকলি ক্যালসিয়াম, ম্যাগনেসিয়াম, ফসফরাস, ভিটামিন-কে ও ভিটামিন-ডি’র উচ্চ উৎস। এই উপাদানগুলো হাড়ের ঘনত্ব ও গঠনে কাজ করে। প্রতিদিন এক কাপ ব্রকলি খেলে হাড়ের ক্ষয় প্রতিরোধ করা যায়।
  • কমলা: কমলা ভিটামিন-সি ও ক্যালসিয়ামের উচ্চ উৎস। ভিটামিন-সি হাড়ের গঠনে কাজ করে এবং ক্যালসিয়ামের শোষণে সাহায্য করে। প্রতিদিন একটি কমলা খেলে হাড়ের ক্ষয় প্রতিরোধ করা যায়।
  • এছাড়াও, হাড়ের ক্ষয় প্রতিরোধে শাকসবজি, হাড়সহ ছোট মাছ, সরিষার তেল, ডিম, গরুর কলিজা, মাখন, সামুদ্রিক মাছ, কড লিভার তেল, স্যালমন মাছ ইত্যাদি খাবার গ্রহণ করা উচিত।
  • এই খাবারগুলো হাড়ের জন্য প্রয়োজনীয় উপাদান যেমন ক্যালসিয়াম, ফসফরাস, ম্যাগনেসিয়াম, ভিটামিন-ডি, ভিটামিন-কে ইত্যাদি সরবরাহ করে।হাড়ের ক্ষয় রোগ বা অস্টিওপোরোসিস হলো এমন একটি রোগ, যার ফলে হাড়ের ঘনত্ব কমে যায় এবং হাড় ভেঙে যাওয়ার ঝুঁকি বাড়ে। 
এই রোগের কারণ হতে পারে ক্যালসিয়াম ও ভিটামিন ডি এর অভাব, হরমোনের সমস্যা, ধূমপান, অ্যালকোহল সেবন, শরীরচর্চা না করা ইত্যাদি।

মেরুদন্ডের হাড়ের ক্ষয়ের কারণ ও লক্ষণ:

মেরুদন্ডের হাড় ক্ষয় রোগ একটি দীর্ঘস্থায়ী সমস্যা।এই রোগ টি সঠিক সময় বুঝতে না পারলে তা ধীরে ধীরে জঠিল আকার ধারণ করে।
কারণ:
পুরুষদের তুলনায় মাহিলাদের এই রোগ বেশ দেখা দেয়।কারণ হরমোনের প্রভাব এবং কৈশরে ও পরবর্তী সময়ে পর্যপ্ত খেলাধূলা ও শরীরচর্চার অভাব।পঁচিশ বছর পার হলে মহিলাদের এই রোগ বেশী দেখা দেয়।তবে পুরুষদের ক্ষেত্রে ও এই রোগের ব্যাপক বিস্তার দেখা যাচ্ছে ।জীবনযাপনে শরীরচর্চার প্রভাব কমে মস্তিস্কের কাজ বৃদ্ধি পাওয়ার এ রোগ পুরুষদের মধ্যেও দেখা দিচ্ছে।
লক্ষণ:
কাঁধে, কোমরে,কিংবা মাজায় ব্যাথা দেখা দেয়।
দীর্ঘক্ষন বসতে কিংবা দাঁড়াতে না পারা।
ধীরে ধীরে ব্যাথা সমস্ত পায়ে ছড়িয়ে পরে।
ব্যাথার তীব্রতা বাড়লে পিঠে জ্বালা পোড়া অনুভূত হতে পারে।

মাজার হাড় ক্ষয় প্রতিরোধে করণীয় :

নিয়মিত শরীরচর্চা করা। এতে হাড়ের শেষের অংশের রক্ত চলাচল বৃদ্ধি করে এবং হাড়ের সচলতা বাড়াতে সাহায্য করে। যেমন- হাঁটা, সাইকেল চালানো, সাঁতার করা, ইয়োগা ইত্যাদি।
সুষম ওজন রাখা। অতিরিক্ত ওজন হাড়ের শেষের অংশের উপর চাপ বাড়ায় এবং হাড় ক্ষয়ের ঝুঁকি বাড়ায়।
পর্যাপ্ত পরিমাণ ক্যালসিয়াম ও ভিটামিন ডি সমৃদ্ধ খাবার গ্রহণ করা। এতে হাড়ের শক্তি বাড়ে এবং হাড়ের ক্ষয় কমে। যেমন- দুধ, শাকসবজি, হাড়সহ ছোট মাছ, ফলমূল, সরিষার তেল, সামুদ্রিক মাছ, কড লিভার তেল, ডিম, গরুর কলিজা, মাখন ইত্যাদি।
ধূমপান ও অ্যালকোহল সেবন থেকে বিরত থাকা। এগুলো কারণে হাড়ের ক্ষয় বাড়াতে পারে।ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ী ঔষুধ সেবন করা। 

হাড় ক্ষয় রোধের ঔষুধ :

কিছু ঔষুধ হাড়ের শেষের অংশের ব্যথা ও সূজন কমাতে এবং হাড়ের ক্ষয় প্রতিরোধে সাহায্য করে।নিম্নে তা আলোচনা করা হলো :
হাড় ক্ষয় বা অস্টিওপরোসিস একটি সাধারণ সমস্যা, যা হাড়ের ঘনত্ব কমে যাওয়ার ফলে হাড় ভেঙে যাওয়ার ঝুঁকি বাড়ায়। হাড় ক্ষয় রোধে কিছু ঔষুধ আছে,যেমন 

বিসফোস্ফোনেটস: এই ধরনের ঔষুধ হাড়ের ক্ষয় কমিয়ে হাড়ের শক্তি বাড়ায়। এই গ্রুপের কিছু ঔষুধ হলো আলেন্ড্রোনেট, রিসেড্রোনেট, ইবান্ড্রোনেট, জোলেড্রোনেট ইত্যাদি।

হরমোন থেরাপি: মহিলাদের ক্ষেত্রে ইস্ট্রোজেন হরমোনের অভাব হাড় ক্ষয়ের একটি কারণ। তাই ইস্ট্রোজেন থেরাপি হাড় ক্ষয় রোধে সাহায্য করতে পারে। তবে এই থেরাপির কিছু পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া ও ঝুঁকি থাকতে পারে, যেমন- স্তন ক্যান্সার, রক্তচাপ, হৃদরোগ ইত্যাদি।

রালক্সিফেন: এটি একটি সেলেক্টিভ ইস্ট্রোজেন রিসেপ্টর মডুলেটর (সার্ম) যা ইস্ট্রোজেনের মতো কাজ করে। এটি হাড়ের ঘনত্ব বাড়াতে এবং হাড় ভাঙার ঝুঁকি কমাতে সহায়তা করে। এটি স্তন ক্যান্সারের ঝুঁকি কমাতেও পারে।

ক্যালসিয়াম ও ভিটামিন ডি সাপ্লিমেন্ট: হাড়ের প্রধান উপাদান হচ্ছে ক্যালসিয়াম, যা ভিটামিন ডি র সাহায্যে শরীরে শোষিত হয়। তাই যাদের ক্যালসিয়াম ও ভিটামিন ডির অভাব আছে, তাদের ক্যালসিয়াম ও ভিটামিন ডি সাপ্লিমেন্ট গ্রহণ করা উচিত।এছাড়াও কিছু ঔষুধ আছে, যেগুলো হাড় ক্ষয় রোধে ব্যবহৃত হতে পারে, যেমন- টেরিপারাটাইড, ডেনোসুমাব, রোমোসোজুমাব ইত্যাদি। 

এই ঔষুধগুলোর ক্ষেত্রে চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী গ্রহণ করতে হবে।হাড় ক্ষয় রোধে ঔষুধের পাশাপাশি কিছু অন্যান্য উপায় ও আছে, যেমন-নিয়মিত ব্যায়াম করা।ক্যালসিয়াম ও ভিটামিন ডি সমৃদ্ধ খাবার গ্রহণ করা।
ধূমপান ও মদ্যপান থেকে বিরত থাকা।ডায়াবেটিস, থাইরয়েড, কিডনি রোগ ইত্যাদি নিয়ন্ত্রণে রাখা।হাড় ভাঙা রোধে বাথরুমের পিচ্ছিল ভাব দূর করা।রাতে ঘরে মৃদু আলো জ্বালিয়ে রাখা।অতিরিক্ত ওজন বহন না করা ।

শেষ কথা:

প্রিয় পাঠক আশা করছি আপনারা আমাদের এই হাড়ের ক্ষয় সম্পর্কিত আটিকেল টি পড়ে আপনাদের প্রয়োজনীয় তথ্যগুলো পেয়ে গেছেন। আপনাদের যদি এই আর্টিকেল সম্পর্কে আরো কিছু বিষয় জানার থাকে তাহলে অবশ্যয় কমেন্ট করে জানাবেন।আর যদি আর্টিকেল টি ভালো লেগে থাকে তাহলে প্রিয়জনদের সঙ্গে শেয়ার করবেন ধন্যবাদ ভালো থাকবেন। আসসালামু আলাইকুম।

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

অর্ডিনারি আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url