চূলে খুশকি হওয়ার কারণ ও খুশকি দূর কারার ঘরোয়া উপায় সম্পর্কে বিস্তারিত জেনে নিন।

প্রিয় পাঠক আসসালামু আলাইকুম আশা করছি আপনারা ভালো আছেন।আজ আমি আপনাদের কে আমাদের মাথার চূলের একটা বড় সমস্য খূশকি সম্পর্কে আলোচনা করবো।আপনারা জানেন খুশকি এমন একটি সমস্যা যা মহুর্তের মধ্যে আমাদের স্মাটনেস কে নষ্ট করে দিতে পারে ।
চুলের খুশকি দুর করার ঘরোয়া উপায়

তাই আজকে আমি আপনাদের কে মাথার চূলে খুশকি হওয়ার কারণ , খুশকি দূর কারার ঘরোয়া উপায় নিয়ে আলোচনা করবো । আপানারা যদি আপনাদের মূল্যবান সময় নষ্ট করে আমাদের সঙ্গে থাকেন তাহলে আপনারা আরো জানতে পারবেন ,চিরতরে খুশকি দূর করার উপায়,খুশকি দূর করার ঔষুধ,ছেলেদের খুশকি দূর করার উপায় সহ আরো অন্যান্য বিষয় সম্পর্কে।তাহলে চলুন আর দেরি না করে মূল আলোচনায় যাওয়া যাক।

ভূমিকা:

আমাদের চূল যেমনি হোক না কেন চূল আমাদের সৌন্দর্যে র একটা বড় অংশ।আর আমাদের এই চূলের অন্যতম শত্রু হলো খুশকি।খুশকি আমাদের চূলের একটি সাধারণ সমস্যা মনে হলেও এটা অনেক সময় আমাদের ভোগান্তি কারণ হতে পারে ।আর এই খুশকি হতে রেহায় পেতে আমরা বাজার থেকে নানা রকম শ্যাম্প ও লোশন ব্যবহার করে থাকি।
কিন্ত সেগুলো তে থাকা রাসায়নিক উপাদান আমাদের চূলের উপকারের চাইতে ক্ষতি করে বেশী। তাই মাথার খুশকি দূর করার জন্য কেমিক্যাল উপাদানের চাইতে প্রাকৃতিক উপদান ই বেশী কার্যকর ।আমরা আজকে এই আর্টিকেলে মাধ্যমে মাথার চূলের খুশকি হওয়ার কারণ থেকে শুরু করে ,খুশকি দূর করার উপায় সহ মাথার চূলের খুশকি সম্পর্কে আরো কিছু বিষয় নিয়ে আলোচনা করবো। 

মাথার চুলে খুশকি হওয়ার কারণ:

মাথার চুলে খুশকি হওয়ার কারণ হতে পারে বিভিন্ন। কিছু সাধারণ কারণ হলো:মাথার ত্বকের এক ধরনের ছত্রাক বা ফাঙ্গাস বাসা বাঁধা। এই ছত্রাক মাথার ত্বকের তেল ও মৃত কোষ খেয়ে বৃদ্ধি পায় এবং খুশকি তৈরি করে।মাথার ত্বক অতিরিক্ত শুষ্ক বা তেলাক্ত হওয়া। এটি ত্বকের পরিমাণ ও গুণের উপর নির্ভর করে।চুলের পণ্য যেমন শ্যাম্পু, কন্ডিশনার, জেল, স্প্রে ইত্যাদি ব্যবহার করা। 
এই পণ্যগুলো মাথার ত্বকের পিএইচ বালেন্স বিঘটন করে এবং খুশকি বাড়াতে পারে।চুল পরিষ্কার না করা বা ভালো করে না ধোয়া। এটি মাথার ত্বকে ধুলো, ময়লা, তেল ও মৃত কোষ জমাতে পারে যা খুশকি সৃষ্টি করে।চুল ভেজা অবস্থায় বেঁধে রাখা বা বেশি গরম বা ঠান্ডা পানি দিয়ে ধোয়া। 
এটি মাথার ত্বকেরনামি ও তাপমাত্রা কমিয়ে দেয় এবং খুশকি বাড়াতে পারে।মানসিক চাপ, টেনশন, বিরক্তি বা উদ্বেগ।এই অবস্থায় মাথার ত্বকের তেল বা সেবাম উৎপাদন বেড়ে যায় যা খুশকির কারণ হতে পারে।কিছু চর্মরোগ যেমন সেবোরিক ডার্মাটাইটিস, সোরিয়াসিস, একজিমা ইত্যাদি।
এই রোগগুলো মাথার ত্বকের শুষ্কতা, প্রদাহ, লালচে ও খুশকি সৃষ্টি করে।আশা করি এই তথ্যগুলো আপনার কাজে লাগবে।

খুশকি দূর কারার ঘরোয়া উপায়:

খুশকি হলো মাথার ত্বকের শুকনো চামড়ার কণা যা চুলে আটকে যায়। এটি চুলকানি, চুলপড়া এবং ত্বকের সমস্যা সৃষ্টি করতে পারে। খুশকি দূর করার জন্য আপনি কিছু ঘরোয়া উপায় ব্যবহার করতে পারেন। আমি আপনাকে কিছু উপায় সুপারিশ করতে পারি।

ভিনেগার দিয়ে খুশকি দূর করার উপায়: ভিনেগার মাথার ত্বকের এসিডিটি বাড়ায় এবং ছত্রাক ও ব্যাকটেরিয়াকে ধ্বংস করে। এটি চুলকানি ও ত্বকের শুষ্কতা কমাতে সহায়ক। ব্যবহারের নিয়ম: সমান পরিমাণে পানি ও সাদা ভিনেগার মিশিয়ে মাথায় ৩০ মিনিট রাখুন। তারপর মাথা ভালো করে ধুয়ে ফেলুন। সপ্তাহে দুই বার এই পদ্ধতি অনুসরণ করুন।

বেকিং সোডা দিয়ে খুশকি দূর করার উপায়: বেকিং সোডা মাথার ত্বকের মৃত কোষ ও তেল সরিয়ে ফেলে। এটি চুলের ফলিকুলগুলোকে স্বাস্থ্যকর রাখে। ব্যবহারের নিয়ম: চুলে শ্যাম্পু করার সময় শ্যাম্পুর সাথে একটু বেকিং সোডা মিশিয়ে চুল পরিষ্কার করুন। নিয়মিত ব্যবহারে এটি খুশকি দূর করতে সাহায্য করবে।

নিম দিয়ে খুশকি দূর করার উপায়: নিমে রয়েছে অনেক উপকারী গুণ যা চর্মরোগ ও ছত্রাকের বিরুদ্ধে কার্যকর। এটি চুলকানি ও ত্বকের প্রদাহ কমাতে সহায়ক। ব্যবহারের নিয়ম: নিমপাতা সেদ্ধ করে তৈরি পানি দিয়ে মাথা ধুয়ে ফেলুন। আপনি চাইলে নিমপাতা বেটে মাথায় লাগিয়ে ১ ঘণ্টা রাখতে পারেন।আশা করি এই উপায়গুলো আপনার খুশকি দূর করতে সাহায্য করবে ।

চিরতরে খুশকি দূর করার উপায়: 

চিরতরে খুশকি দূর করার জন্য আপনি কিছু ঘরোয়া উপায় ব্যবহার করতে পারেন। আমি আপনাকে কিছু উপায় সুপারিশ করতে পারি।

টক দই, ডিম, লেবু ও অলিভ অয়েল দিয়ে খুশকি দূর করার উপায়: এই উপকরণগুলো মাথার ত্বকের এসিডিটি বালেন্স করে এবং ছত্রাক ও ব্যাকটেরিয়াকে ধ্বংস করে। এটি চুলকানি ও ত্বকের শুষ্কতা কমাতে সহায়ক। ব্যবহারের নিয়ম: সমান পরিমাণে টক দই, ডিমের সাদা অংশ, লেবুর রস ও অলিভ অয়েল মিশিয়ে মাথায় ৩০ মিনিট রাখুন। 
তারপর মাথা ভালো করে ধুয়ে ফেলুন। সপ্তাহে দুই বার এই পদ্ধতি অনুসরণ করুন।

বেকিং সোডা দিয়ে খুশকি দূর করার উপায়: বেকিং সোডা মাথার ত্বকের মৃত কোষ ও তেল সরিয়ে ফেলে। এটি চুলের ফলিকুলগুলোকে স্বাস্থ্যকর রাখে। ব্যবহারের নিয়ম: চুলে শ্যাম্পু করার সময় শ্যাম্পুর সাথে একটু বেকিং সোডা মিশিয়ে চুল পরিষ্কার করুন। নিয়মিত ব্যবহারে এটি খুশকি দূর করতে সাহায্য করবে।

নিম দিয়ে খুশকি দূর করার উপায়: নিমে রয়েছে অনেক উপকারী গুণ যা চর্মরোগ ও ছত্রাকের বিরুদ্ধে কার্যকর। এটি চুলকানি ও ত্বকের প্রদাহ কমাতে সহায়ক। ব্যবহারের নিয়ম: নিমপাতা সেদ্ধ করে তৈরি পানি দিয়ে মাথা ধুয়ে ফেলুন। আপনি চাইলে নিমপাতা বেটে মাথায় লাগিয়ে ১ ঘণ্টা রাখতে পারেন।

খুশকি দূর করার ঔষুধ: 

খুশকি দূর করার জন্য আপনি কিছু ঔষুধ ব্যবহার করতে পারেন। আমি আপনাকে কিছু ঔষুধ সুপারিশ করতে পারি।
কেটোকোনাজল শ্যাম্পু: এটি একটি এন্টিফাঙ্গাল শ্যাম্পু যা মাথার ত্বকের ছত্রাক ও ব্যাকটেরিয়াকে ধ্বংস করে। এটি চুলকানি, ত্বকের প্রদাহ ও খুশকি কমাতে সহায়ক। এটি সপ্তাহে দুই বার ব্যবহার করতে হবে।

সেলেনিয়াম সালফাইড শ্যাম্পু: এটি একটি এন্টিডান্ড্রাফ শ্যাম্পু যা মাথার ত্বকের তেল ও মৃত কোষ সরিয়ে ফেলে। এটি চুলের ফলিকুলগুলোকে স্বাস্থ্যকর রাখে। এটি সপ্তাহে এক বার ব্যবহার করতে হবে।


জিনক পিরিথিওন শ্যাম্পু: এটি একটি এন্টিসেপটিক শ্যাম্পু যা মাথার ত্বকের পিএইচ বালেন্স করে। এটি চুলকানি, ত্বকের শুষ্কতা ও খুশকি কমাতে সহায়ক। এটি সপ্তাহে তিন বার ব্যবহার করতে হবে।আশা করি এই ঔষুধগুলো আপনার খুশকি দূর করতে সাহায্য করবে।

ছেলেদের মাথার খুশকি দূর করার উপায়: 

ছেলেদের মাথার খুশকি দূর করার জন্য আপনি কিছু ঘরোয়া উপায় বা ঔষুধ ব্যবহার করতে পারেন। আমি আপনাকে কিছু উপায় ও ঔষুধ সুপারিশ করতে পারি।ঘরোয়া উপায়: আপনি চাইলে লেবুর রস, নারকেল তেল, টক দই, বেকিং সোডা, নিমপাতা, চায়ের লিকার, অলিভ অয়েল, মেথি বা ঘৃতকুমারী দিয়ে খুশকি দূর করতে পারেন।
এই উপকরণগুলো মাথার ত্বকের এসিডিটি বালেন্স করে, ছত্রাক ও ব্যাকটেরিয়াকে ধ্বংস করে, চুলকানি ও ত্বকের শুষ্কতা কমাতে সহায়ক। ঔষুধ: আপনি চাইলে কেটোকোনাজল শ্যাম্পু, সেলেনিয়াম সালফাইড শ্যাম্পু, জিনক পিরিথিওন শ্যাম্পু বা অন্যান্য এন্টিফাঙ্গাল, এন্টিডান্ড্রাফ বা এন্টিসেপটিক শ্যাম্পু ব্যবহার করতে পারেন। 
এই ঔষুধগুলো মাথার ত্বকের ছত্রাক, ব্যাকটেরিয়া, তেল ও মৃত কোষ সরিয়ে ফেলে,

চুলে লেবু দিয়ে খুশকি দুর করার উপায় : 

চুলে লেবু দিয়ে খুশকি দুর করার উপায় অনেক আছে। লেবুর রস চুলের ত্বকের পিএইচ স্তর সমন্বয় করে এবং খুশকি উৎপাদন করা ব্যাকটেরিয়া ও ফাংগাসকে মেরে ফেলে। আমি আপনাকে কিছু সহজ ও কার্যকর উপায় বলতে পারি।

লেবুর রস ও মধু: ১ টেবিল চামচ লেবুর রসে ২ টেবিল চামচ মধু মিশিয়ে নিন। ১০ মিনিটের জন্য সারা মাথায় এটি প্রয়োগ করুন। পরে হালকা শ্যাম্পু দিয়ে ধুয়ে ফেলুন। এটি সপ্তাহে দুবার করুন।

লেবুর রস ও নারিকেল তেল: ১ টেবিল চামচ লেবুর রসে ৫ টেবিল চামচ নারিকেল তেল মিশিয়ে নিন। এটি চুলের শিকড়ে থেকে শেষ পর্যন্ত মালিশ করে প্রয়োগ করুন। ২০ মিনিট পর শ্যাম্পু করে ধুয়ে ফেলুন। এটি সপ্তাহে একবার করুন।

লেবুর রস ও সিরকা: ১ টেবিল চামচ লেবুর রসে ২ টেবিল চামচ সিরকা মিশিয়ে নিন। এটি চুলের শিকড়ে থেকে শেষ পর্যন্ত প্রয়োগ করুন। ১৫ মিনিট পর শ্যাম্পু করে ধুয়ে ফেলুন। এটি সপ্তাহে দুইবার করুন।এই উপায়গুলো ব্যবহার করে আপনি খুশকি দূর করতে পারবেন। আশা করি আপনার চুল সুন্দর ও স্বাস্থ্য থাকবে।

অ্যালোভেরা দিয়ে খুশকি দুর করার উপায়: 

অ্যালোভেরা দিয়ে খুশকি দুর করার উপায় এমন হলো:অ্যালোভেরা জেল ব্লেন্ড করে মাথার তালুতে লাগিয়ে আধা ঘণ্টা রেখে ধুয়ে ফেলুন। এটি খুশকি সৃষ্টিকারী ছত্রাক ও ভাইরাসকে মেরে ফেলে।অ্যালোভেরা জেল ও টি ট্রি অয়েল একসাথে মিশিয়ে হেয়ার সেরাম হিসেবে ব্যবহার করুন। এটি চুলকানি কমায় এবং চুলের ঝলমল বাড়ায়।
অ্যালোভেরা জেলের সঙ্গে পেঁয়াজের রস ও নারিকেল তেল মিশিয়ে চুলের গোড়ায় ম্যাসাজ করুন। সারারাত রেখে পরদিন মাইল্ড শ্যাম্পু দিয়ে ধুয়ে ফেলুন। এটি চুল পড়া বন্ধ করে এবং চুলের কোমলতা বাড়ায়।এই উপায়গুলো ব্যবহার করে আপনি খুশকি দূর করতে পারবেন। আশা করি আপনার চুল সুন্দর ও স্বাস্থ্য থাকবে।

তৈলাক্ত খুশকি দূর করার উপায়: 

তৈলাক্ত খুশকি হলে মাথার ত্বকে অতিরিক্ত তৈল উৎপন্ন হয় যা ছত্রাকের বৃদ্ধি করে। এই সমস্যা দূর করতে আপনি কিছু ঘরোয়া উপায় ব্যবহার করতে পারেন। যেমন:

লেবুর রস ও নারিকেল তেল: ১ টেবিল চামচ লেবুর রসে ৫ টেবিল চামচ নারিকেল তেল মিশিয়ে নিন। এটি চুলের শিকড়ে থেকে শেষ পর্যন্ত মালিশ করে প্রয়োগ করুন। ২০ মিনিট পর শ্যাম্পু করে ধুয়ে ফেলুন। এটি সপ্তাহে একবার করুন।

লেবুর রস ও সিরকা: ১ টেবিল চামচ লেবুর রসে ২ টেবিল চামচ সিরকা মিশিয়ে নিন। এটি চুলের শিকড়ে থেকে শেষ পর্যন্ত প্রয়োগ করুন। ১৫ মিনিট পর শ্যাম্পু করে ধুয়ে ফেলুন। এটি সপ্তাহে দুইবার করুন।

টি ট্রি অয়েল: এই তেলে রয়েছে ছত্রাক ও ব্যাকটেরিয়া নির্মূল করার গুণ। এটি শ্যাম্পুর সাথে মিশিয়ে চুল ধুয়ে ফেলুন অথবা চুলের গোড়ায় সরাসরি লাগিয়ে দিন। এটি সপ্তাহে দুই থেকে তিনবার ব্যবহার করুন।এই উপায়গুলো ব্যবহার করে আপনি তৈলাক্ত খুশকি দূর করতে পারবেন।

শেষ কথা:

প্রিয় পাঠক আশা করছি আপনারা উপরোক্ত বিষয়গুলো পড়ে খুশকি হওয়ার কারণ থেকে শুরু করে দূর করার উপায় সহ আরো অন্যান্য বিষয় সম্পর্কে বিস্তারিত জেনে নিয়েছেন।আপনাদের যদি আমাদের আর্টিকেল টি ভালো লেগে থাকে তাহলে অবশ্যয় কমেন্ট করে জানাবেন এবং আপনার প্রিয়জনদের সঙ্গে শেয়ার করবেন ধন্যবাদ।আসসালামু আলাইকুম।

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

অর্ডিনারি আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url