কাজু বাদামের পুষ্টিগুন ও কাজু বাদাম খাওয়ার উপকারিতা অপকারিতা

 প্রিয় পাঠক আসসালামু আলাইকুম সাবাই কে আমার ওয়েবসাইটে স্বগতম।আমরা আজ কাজু বাদামের পুষ্টি গুন এবং কাজু বাদাম খাওয়ার উপকারিতা অপকারিতা সম্পর্কে আলোচনা করবো। আশাকরি সম্পন্ন আর্টিকেল টি মনযোগ সহকারে পড়বেন। তাহলে কাজু বাদামের গুনাগুন সম্পর্ক জানতে পারবেন।

এবং যে সব কারণে খাবেন কাজু বাদাম এ বিষয় টি জেনে আপনি উপকৃত হবেন।আপনি যদি শেষ পর্যন্ত আমাদের সাথে থাকেন তাহলে কাজু বাদাম খাওয়া নিয়ম,কাজু বাদাম খাওয়ার উপকারি অপকারিতা,কাজু বাদাম কখন খাওয়া ভালো, সে সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে পারবেন।তাহলে চলুন কথা না বাড়িয়ে এ সম্পর্কে বিস্তারিত জেনে নেয়া যাক।

ভূমিকা : 

খাদ্য তালিকায় কাজু বাদাম সচেতন মানুষদের ক্ষেত্রে একটি অন্যতম আদর্শ খাবার ।কাজু বাদামে অনেক পুষ্টিগুন রয়েছে তাই এই খাদ্যটি প্রায় সকল মানুষেরাই পছন্দ করে থাক। তাই বাজারে যতগুলো ডাই ফুড রয়েছে তার মধ্যে কাজু বাদামের পুষ্টিগুন অনেক বেশী।এটি খেতেও সুস্বাদু আবার এর রোগ প্রতিরোদ কারার ক্ষমতাও রয়েছে।
আবার কেউ যদি প্রয়োজনের চেয়ে বেশী খেয়ে থাকেন তাহলে ক্ষতি হবার সম্ভাবনা ও রয়েছে। এজন্য কাজুবাদাম খাওয়ার উপকারিতা আপকারিতা,কাজু বাদাম খাবার নিয়ম এবং কাজু বাদামের ক্ষতিকারক দিকসহ আন্যান্য কিছু তথ্য।আমার বিশ্বাস আপনারা যদি সম্পন্ন আর্টিকেলটি পড়েন তাহলে এ সম্পর্কে বিস্তারিত ধারণা পেয়ে যাবেন।

কাজু বাদামের পুষ্টিগুন: 

কাজুবাদাম অত্যন্ত সুস্বাদুও পুষ্টিকর একটি ফলবীজ। বিভিন্ন ধরনের ড্রাই ফুডের মধ্যে কাজুবাদাম অন্যতম। আর বিভিন্ন ধরনের বাদামের মধ্যে কাজুবাদামই বেশী জনপ্রিয়। কেননা ড্রাই ফুডগুলোর মধ্যে এটির পুষ্টিগুন সবচেয়ে বেশী ।কাজু গাছ থেকে কাজু ফল ও কাজু বাদামপাওয়া যায়।এটি অনেক দেশের গুরুত্বপূর্ন অর্থকারী ফসল।
এই গাছের আদি নিবাস ব্রাজির।সারাবিশ্বে বিশেষ করে উষ্ণ আবহাওয়ার দেশগুলোতে এটি চাষ হয়।কাজু বাদামের পুষ্টিগুন মার্কিন কৃষি বিভাগ( ইউ এস ডি এ)জাতীয় পুষ্টি উপাত্ত নির্ভরযোগ্য সূত্র আনুযায়ী ১আউন্স কাঁচা কাজু (২৮.৩৫ গ্রাম) রয়েছে।
  • ক্যালরি-১৫৭ গ্রাম
  • চিনি-১.৫৬ গ্রাম
  • কাবোহাইড্রেট-৮.৫৬ গ্রাম
  • ফাইবার-০.৯ গ্রাম
  • প্রোটিন-৫.১৭ গ্রাম
  • ক্যালসিয়াম-১০মিলিগ্রাম
  • মোটচর্বি ১২.৪৩গ্রাম
  • আয়রন- ১.৮৯ মিলিগ্রাম
  • পাটাসিয়াম-১৮৭ মিলিগ্রাম
  • ম্যাগনেসিয়াম-৮৩ গ্রাম
  • ফসফরাস-১৬৮গ্রাম
  • সোডিয়াম-৩মিলিগ্রাম
  • জিংক-১.৬৪মিলিগ্রাম
প্রাপ্তভিটামিনভিটামিনএ(থায়ামিনবি১)রিবোফ্লেভিন(বি২)নায়াসিন(বি৯)প্যানটোথেনিকঅ্যাসিড(বি),ভিটামিনবি৬ফোলেট(বি৯)ভিটামিন(বি১২) ভিটামিন-সি ভিটামিন-ডি ভিটামিন-ই ভিটামিন-কে ইত্যাদি ভিটামিনবিভিন্নপরিমানেপাওয়াযায়।
প্রাপ্তখনিজপদার্থ: ক্যালসিয়াম,কপার,লৌহ,ম্যাগানিজ,ফসফরস,সেলিনিয়াম,জিংক ইত্যাদি খনিজ বিভিন্ন পরিমানে পাওয়া যায়।

কাজুবাদামেরউপকারিতা:

হার্ট ভালো রাখে:কাজুবাদামের থাকা ফ্যাটি এসিড পটাশিয়াম অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট আমাদের হার্টের জন্য খুব ভালো।

হাড় মজবুত রাখে :হাড় যত্ন নিতে প্রয়োজন প্রচুরখনিজ উপাদানযা আমাদের হাড় মজবুত রাখে।

রক্তচাপনিয়ন্ত্রণকরে:কাজুবাদামেরফ্যাট,পটাসিয়াম,ম্যাগেনসিয়াম উচ্চ রক্তচাপ সম্পন্ন ব্যক্তিদের রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করে।

ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণ করে:কাজু বাদামে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে ফাইবার।যা রক্তে শর্করার পরিমাণ কমিয়ে আনতে সাহায্য করে।ফলে টাইপ টু ডায়াবেটিস রোগীদের ক্ষেত্রে কাজুবাদাম খুব উপকারী।


কোলেস্টেরল কমায়:কাজু বাদাম আমাদের শরীর থেকে খারাপ কোলেস্টেরলের মাত্রা কমাতে সাহায্য করে। কাজুবাদাম রাতে দুধের সঙ্গে ভিজিয়ে রাখবে। সারারাত দুধে ভিজিয়ে রাখা কাজু সকালে খেলে ব্যর্ধক্যে হাড়ের ক্ষয় নিয়ে চিন্তা করতে হবে ন। কারণ কাজু এবং দুধে দুটোতেই রয়েছে ভিটামিন কে মিনারেল ভিটামিন বি৬,যা হাড়ের ক্ষয় রোধকরে পিশির ব্যথা যন্ত্রণা উপসর করে। 

কাজুবাদামেরঅপকারিতা কি কি? 

ভাজা লবনযুক্ত কাজু স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর হতে পারে। সর্বোত্তম সুবিধার জন্য কাঁচা খাওয়া পরামর্শ দেওয়া হয়। কাজুবাদাম অতিরিক্ত খাবার ফলে -ফোলা ভাব কোষ্ঠকাঠিন্যওজন বৃদ্ধি এবং জয়েন্ট ফুলে যেতে পারে। ত্বকে প্রয়োগ করা হলে জ্বালা এবং ফোসকা পড়তে পারে।কোন ব্যক্তি যদি এলার্জির সমস্যা থেকে তাহলে সে ব্যক্তি কাজুবাদামথেকে দূরে থাকাই ভালো।
কাজুবাদামে রয়েছে উচ্চঅক্সালেট ।বেশি পরিমাণ অক্সালেট আমাদের শরীরে প্রবেশ করলেই কিডনিতে পাথর জমতে পারে। তাই কিডনিতে সমস্যা রয়েছে সেইসকল ব্যক্তির কাজুবাদাম থেকে দূরে থাকা ভালো।

কাজু বাদাম খাওয়ার সঠিক নিয়ম :

কাজু বাদাম খাওয়ার উপকারিতা অনেক তাই এটি নিয়মিত খাওয়ার অভ্যাস করা উচিৎ।তবে কিভাবে বা কি নিয়মে খাবেন তা জানা দরকার। এর জন্য প্রথমে আপনাকে ঠিক করতে হবে আপনি কেন খাবেন? এবং কখন খাবেন? 
যদি আপনার ডায়েটের জন্য খেয়ে থাকেন তাহলে সকালের নাস্তার পর এবং দুপুরের খাবারের আগের সময় যেমন ১১টা থেকে ১টার মধ্যে এক মুঠো বাদাম খেতে পারেন। আবার বিকালেও যখন হালকা ক্ষুধা লাগবে তখন নাস্তা হিসেবে অন্য খাবার না খেয়ে এক মুঠো কাজু বাদম ৪টা থেকে ৫:৩০টার মধ্যেও খেতে পারে।
 এতে ক্ষুধা চলে যাবে সেই সাথে আপনার ডায়াটও ঠিক থাকবে। ডায়াট ছাড়া যদি অন্য কোন কারণে খেয়ে থাকেন।তাহলে ১০ থেকে ১২টি বাদাম রাতে ভিজিয়ে রেখে সকালে তা খেয়ে নিবেন।

গর্ভাবস্থায় কাজুবাদামের উপকারিতা :

কাজুবাদাম গর্ভাবস্থার জন্য ভালো কারণে এগুলি অত্যবশক পুষ্টিতে ভরপুর যা মা এবং ভ্রণ উভয় স্বাস্থ্যের উন্নতি করে। আপনার গর্ভাবস্থায় ডায়াটে কাজু যুক্ত করার জন্য এখানে পাঁচটি কারণ রয়েছে।

জন্মগত ত্রুটি রোধ করে:গর্ভাবস্থায় প্রথম ত্রৈমাসিকে কাজু যোগ করা গুরুত্বপূর্ণ।কাজুতে প্রচুর পরিমাণ ফোলেট পাওয়া যায়। এটি ভ্রুনের বিকাশ হৃদপিন্ডের গঠন ভ্রুনের সামগ্রিক সংবহনতন্ত্রের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
উপরোক্ত ফোলেট ভ্রুনের নিউরাল টিউব গঠনের সাহায্য করে।ভ্রুনেরজন্মগত ত্রুটি রোধ করতে,আপনাকে অবশ্যই আপনার গর্ভাবস্থা-বান্ধব খাদ্যে কাজু বাদম যোগ করতে হবে।

আয়রনের ঘাটতি রোধ করে :কাজু প্রাকৃতিকভাবে আয়রন সমৃদ্ধ এই গুলিকে আপনার ডায়েটে যুক্ত করে, আপনি আপনার শরীরে রক্তস্বল্পতাএবং ক্লান্তি হবার সম্ভাবনা হ্রাস করে। যখনই খুদা লাগবে কয়েক টুকরা কাজু নিন। আপনার এবং আপনার বিকাশমান শিশুর উভয়ের জন্য আরো রক্ত উৎপাদন করতে আপনার আয়রন প্রয়োজন। তাই কাজু আয়রন সমৃদ্ধ হওয়ায় গর্ভবতী মহিলার শরীরে লোহিত কণিকা তৈরি করতে সাহায্য করে । 

হজমের স্বাস্থ্যের উন্নতিকরে:গর্ভাবস্থায়, আপনি নিয়মিত মলত্যাগের জন্য সংগ্রাম করবেন।অন্ত্রের গতিবেগে উন্নতি করতে, আপনার গর্ববস্থার ডায়েটে কাজু যোগ করার পরামর্শ দেওয়া হয়,কারণ কাজুতে ম্যাগনেসিয়াম এবং ফাইবার রয়েছে যা কোষ্ঠকাঠিন্য প্রতিরোধ করে এবং স্বাস্থ্যকর পরিপাকতন্ত্রের অবদান রাখে।

কোষ মেরামত :কাজু হল একটি স্বাস্থ্যকর প্রোটিনের উৎস যা গর্ভাবস্থায় কোষ মেরামতের সাহায্য করে। কাজুতে উচ্চ প্রোটিন উপাদান কোষ মেরামত এবং অ্যামিনো এসিড উৎপাদন উভয় ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে । 
প্রোটিন পেশী টিস্যু এবং ক্ষতিগ্রস্ত কোষ মেরামত করে গর্ভবতী মহিলাদের তাদের স্বাস্থ্য এবং শক্তি বজায় রাখতে সাহায্য করে।অতএব,গর্ভাবস্থায় কাজু যোগ করা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ হয়ে ওঠে। 

ভ্রুনের বিকাশ : গর্ভাবস্থায় কাজুবাদাম যোগ করার আরেকটা সুবিধা হল যে তারা ভ্রুনের হার ও দাঁতের বিকাশ কে উৎসাহিত করে কারণ তার ক্যালসিয়ামে ভরপুর থাকে।অধিকন্তু কাজুতে থাকা অত্যাবশ্যকীয় পুষ্টি যেমন ক্যালসিয়াম গর্ভবতী মহিলাদের পেশীর খিছুনি এবং মাইগ্রেন থেকে মুক্তি দেয়। 

কাজুবাদামের ক্ষতিকারক দিক :

পেটের সমস্যায় যারা ভোগেন তারা কাজু বাদাম খেলে তাদেরগ্যাসঅম্বল জাতীয় সমস্যা আরো বেড়ে যেতে পারে। কাজু বাদাম খেলে অত্যাধিক মাত্রায় ওজন বেড়ে যায়। ওজন নিয়ন্ত্রণে রাখতে হলে কাজু বাদাম খাওয়া চলবে না। যাদের এলার্জির সমস্যা তাদের জন্য কাজু বাদাম অত্যন্ত ক্ষতিকারক।

শেষ কথা: 

প্রিয় পাঠক সবশেষে বলা যায় সঠিক নিয়মে কাজু বাদাম খাওয়ার ফলে কাজু বাদামের উপকারিত সহজে পাওয়া যায় । আশা করছি আপনি এই আর্টিকেলটি পড়ে আপনি এই বিষয়ে অল্প কিছু হলেও কাজু বাদামে পুষ্টিগুন,কাজু বাদামের উপকারিত ও অপকারিত,
কাজু বাদাম খাওযার নিয়ম সম্পর্কে জানতে সক্ষম হয়েছেন। আর যদি এই বিষয়  আপনারদের মাঝে কোন প্রশ্ন বা কোন মতামত থেকে থাকে তাহলে অবশ্যই আমাদের কে কমেন্টর মাধ্যমে জানাতে পারেন।

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

অর্ডিনারি আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url