পানিফলের উপকারিতা ও পুষ্টি উপাদান সম্পর্কে জেনে নিন।

প্রিয় পাঠক, আসসালামুআলাইকুম আশা করছি আপনারা ভালো আছেন।আজ আমি আপনাদের কে একটি জলজ ফল পানিফল সম্পর্কে কিছু ধারণা দেয়ার চেষ্টা করবো। পানিফল একটি ত্রিভুজ আকৃতির ফল।এই ফল টি দেখতে তেমন সুন্দর না হলেও এর মধ্যে রয়েছে প্রচুর পরিমানে ভিটামিন এবং পুষ্টিগুন।পানিফল একটি শীতল ফল তাই এটি খেলে শরীর ঠান্ডা হয়ে যায়।
পানিফলের  উপকারিতা ও পুষ্টি উপাদান সম্পর্কে জেনে নিন।

এই ফল টি সাধারণত সেপ্টেম্বর ও অক্টোবর মাসে দিকে পাওয়া যায়।এটি একটি জলজ উদ্ভিদ ফল।এই ফলটি পুকুরে বা নদীর পানিতে চাষ করা হয়।পানিফল সাধারণত কালো এবং সবুজ রঙ্গের হয়ে থাকে।তাই আজকে আমরা আমাদের আর্টিকেলের মাধ্যমে জেনে নেব পানিফল খাওয়ার উপকারিতা ও পুষ্টি উপাদান সম্পর্কে।
তাই আপনারা যদি শেষ পর্যন্ত আমাদের এই আর্টিকেলের সঙ্গে থাকেন তাহলে আপনারা আরো জানতে পারবেন পানিফলের ঔষুধী গুন ,গর্ববস্থায় পানিফলের উপকারিতা এবং পানিফল খাওয়ার অপকারিতা সম্পর্কে ।তাহলে চলুন আর দেরী না করে মূল আলোচনায় যাওয়া যাক

ভূমিকা: 

স্থানীয় নাম সিঙ্গারা হলেও বাজারে এটি পানিফল নামে পরিচিত।পানিতে হয় বলে এই ফলকে আমরা পানিফল বলে থাকি।এই ফলটি আবার ওয়াটার কালট্রপ, বা ফেলো নাট,আবার ডেভিল পন্ড নামে পরিচিত। এ ফলটির স্বাদ পানসে ধরনের এবং দামেও খুব সস্তা। কিন্ত এই ফলের মধ্যে লুকায়িত আছে অধিক পরিমানের পুষ্টিগুন, উপকারি ভিটামিন।
তাই আজকে এই আর্টিকেল পানিফলের উপকারিতা অপকারিতা এবং পুষ্টিগুন সহ পানিফলের আরো কিছু বিষয় নিয়ে আলোচনা করবো।

 পানি ফলের উপকারিতা:

নিম্নে পানি ফলের উপকারিতা সম্পর্কে জেনে নেয়া যাক। 

রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণ করে :পানিফল রক্ত চাপ নিয়ন্ত্রণ করতে সাহায্য করে। অনিয়ন্ত্রিত রক্তচাপের এর চাবিকাঠি রয়েছে পানি ফলের মধ্যে। কারণ এর মধ্যে রয়েছে পটাশিয়াম। তাই রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে ভালো কাজ করে পানিফল। 

পানিফল হার্টকে সুস্থ রাখে :হার্ট কে সুস্থ রাখতে পানিফল সাহায্য করে।কারণ পানি ফলের মধ্যে রয়েছে পটাশিয়াম। আর পটাশিয়াম হৃদ রোগের ঝুঁকি কমাতে সাহায্য করে । পানি ফলের মধ্যে পটাশিয়াম আছে বলে উচ্চ রক্ত নিয়ন্ত্রণ থাকে ফলে হৃদরোগের ঝুকি কামাই।
 
পানিফল প্রদাহ কমায়:পানিফল প্রদাহ কমায় কারণ পানি ফলের মধ্যে রয়েছে প্রচুর পরিমাণ আন্টিঅক্সিডেন্ট। এছাড়ার এর মধ্যে রয়েছে ফিসেটিন, ডয়োসমোটিন,লুটিওনিন এবং টেকটোরিজিন।যা অমৃত কোষগুলোকে সারাতে এবং প্রদাহ কামাতে সাহায্য করে। 

পানিফল চুলের জন্য উপকারি:পানিফল চুলের জন্য উপকারি কারণ পানিফলে রয়েছে পটাশিয়াম, জিংক, ভিটামিন বি,ভিটামিন ই যা মাথার চুল কে মজবুত করে এবং সেই সাথে চুল কে করে চকচকে,লম্বা,আর ঘন।

পানিফল বিষাক্ত পোকামাকড়ের কামড়ের কাজ করে: যখন কোন বিষাক্ত পোকামাকড় কামড়াই তখন আক্রান্তস্থানে জ্বালাপোড়া করে।আর এই জ্বালাপোড়া থেকে তাৎক্ষণিক ফল পেতে হলে পানিফল বেটে আক্রান্ত স্থানে প্রলেপ দিয়ে দিন তাহলে দেখবেন তাড়াতাড়ি জ্বালাযন্ত্রণা থেকে মুক্তি পেয়ে যাবেন। 

পানিফল টিউমারের বৃদ্ধি রোধে কাজ করে: পানিফলের মধ্যে রয়েছে ফেরুলিক নামে একটি অ্যাসিড। যা কিনা এক রকম অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট।ফেলোরিক এসিড ক্যান্সারের কোষের হ্রাস টেনে ধরে এবং টিউমার বৃদ্ধি কমাতে সাহায্য করে। 

পানিফল ডায়বেটিস নিয়ন্ত্রনে কাজ করে :রক্তের মধ্যে চিনির মাত্র বৃদ্ধি পেলে ডায়াবেটিস হতে পারে । আর এই সমস্যা এড়াতে রক্তে চিনি বা সুগারের মাত্রা নিয়ন্ত্রণ করতে পানিফল কাজ করে।কারণ পানি ফলের মধ্যে রয়েছে পলিফেনল নামক উপাদান, যার রক্তে শর্করা নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করে। আমাদের দৈহিক ওজন বৃদ্ধির ফলে নানা রকম রোগের সম্মুখীন হতে হয়। আর এই দৈহিক ওজন নিয়ন্ত্রণে পানিফল সহায়ক ভূমিকা পালন করে। কারণ পানিফলের মধ্যে রয়েছে ফাইবার ও প্রোটিন । প্রোটিন এবং ফাইবার হজম হতে সময় লাগে। ফলে পেট ভরা থাকে এবং ক্ষুধা লাগে কম। 


পানিফল হজমশক্তি বৃদ্ধি করে: পানিফল হজম শক্তির উন্নতি করে। কারণ পানি ফলের মধ্যে রয়েছে ফাইবার। আর এই ফাইবার আমাদের হজম বৃদ্ধি করতে সাহায্য করে। 

পানিফল কোষ্ঠকাঠিন্যে দূর করে:পানিফল কোষ্ঠকাঠিন্যের মতন রোগ হতে মুক্তি দিতে সাহায্য করে। কারণ পানিফলের মধ্যে রয়েছে ফাইবার। ফাইবার হজম শক্তি বৃদ্ধি করে, মল নরম করতে সাহায্য করে। 

পানিফল ত্বকের জন্য উপকারি: পানিফল ত্বকের জন্য খুবই উপকারী উপাদান। কারণ পানিফল আমাদের শরীর থেকে টক্সিন বের করে রক্ত কে শুদ্ধ করতে সাহায্য করে। ত্বক উজ্জ্বল করার ক্ষেত্রে পানিফল খুব উপকারী উপাদান।

পানিফল দাঁতমজবুত করে: পানিফল আমাদের দাঁত মজবুত করতে সহায়ক। কারণ পানি ফলের মধ্যে রয়েছে ক্যালসিয়াম ও ফসফরাস যা মজবুতদাঁত গঠনে সহায়তা কর

পানিফল চুলপড়া রোধে সহায়ক:পানিফল চুল পড়া রোধে কাজ করে কারণ পানি ফলের মধ্যে রয়েছে পটাশিয়াম, জিংক, ভিটামিন ই,যা চুলকে মজবুত করার পাশাপাশি চুলকে চকচকে, লম্বা এবং ঘন করতে সাহায্য করে । 

পানিফলের পুষ্টিগুণ:

পানিফলে রয়েছে ব্যাপক পরিমাণে পুষ্টিউপাদান। পুষ্টিতে ভরপুর এই ফলটি আমাদের শরীরের পুষ্টির ঘাটতি পূরণ করে শরীর গঠন এবং রোগ প্রতিরোধ করতে সহায়তা করে। পানিফলে প্রতি ১০০গ্রামে কি পরিমাণ পুষ্টি উপাদান রয়েছে তা নিম্ন আলোচনা করা হলো :
  • প্রোটিন ১.৪৩ গ্রাম, 
  • খাদ্যশক্তি ৬৪ কিলো ক্যালরি, 
  • কার্বোহাইড্রেট ১৭.৭১গ্রাম, 
  • শর্করা ২.৮৬ গ্রাম, 
  • ফাইবার ৫.৭ গ্রাম, 
  • সোডিয়াম ১৪ মিলিগ্রাম,
  • পটাশিয়াম ৫৮৪ মিলিগ্রাম, 
  • ক্যালসিয়াম ১১ মিলিগ্রাম, 
  • ম্যাগনেসিয়াম ২২ মিলিগ্রাম, 
  • ফসফরাস ৬৩ মিলিগ্রাম, 
  • আয়রন ০.০৬ মিলিগ্রাম, 
  • মেঙ্গানিজ ০.৩৩১ মিলিগ্রাম , 
  • জিংক ০.৫ মিলিগ্রাম, থায়ামিন ০.১৪ মিলিগ্রাম, 
  • নিয়াসিন ১ মিলিগ্রাম, 
  • ফলেটর ১৬ মাইক্রোগ্রাম , 
  • রিবোফ্লোবিন ০.২ মিলিগ্রাম, 
  • ভিটামিন বি৬ ০.৩২৮ মিলিগ্রাম, 
  • ভিটামিন বি৫ ০.৪৭৯ মিলিগ্রাম,
  •  ভিটামিন সি ৪ মিলিগ্রাম, 
  • ভিটামিন ই ০.৫ মিলিগ্রাম। 

পানি ফলের ঔষধি গুণ : 

পানিফলের মধ্যে উপকারি গুণ, পুষ্টিগুণ ছাড়াও রয়েছে কিছু ঔষধি গুণ। যেমন -

  • পানিফল এলার্জি দূর করে :যাদের অ্যালার্জির সমস্যা রয়েছে তারা যদি পানিফলের আঁশ শুকিয়ে রুটি বানিয়ে খাওয়া যায় তাহলে এলার্জি দূর হবে এবং পা ফোলার রোগ থাকলে তা কমে যাবে।
  • পোকামাকড়ের কামড়ের ক্ষেত্রে :বিছা পোকা বা অন্যান্য পোকা কামড়ের ফলে যে জ্বালাপোড়া হয় বা ক্ষত সৃষ্টি হয়। সেই আক্রান্ত স্থানে যদি পানিফল বেটে লাগানো যায় তাহলে জ্বালাপোড়া কমবে এবং ব্যথা উপশম হবে।
  • পিত্তজনিত রোগ নাশক রক্ত দাস্তবন্ধকারক:পানিফল প্রস্রাবর্ধক,শোথনাশক ও রুচিবোধক। যকৃতের প্রদাহনাশক ও উদারাময় রোগ নিরাময়ক। এটি যৌনশক্তিবর্ধক ঋতুর অধিক্যজনিত সমস্যায় উপকারী।
  • পানিফল বমি বমি ভাব, এবং হজমের সমস্যা দূর করার ক্ষেত্রে অতুলনীয়।
  • পানিফল ব্লাড প্রেসার নিয়ন্ত্রণ করতে সাহায্য করে।
  • পানিফল রক্ত আমাশা দূর করার ক্ষেত্রে কাজ করে।

গর্ভাবস্থায় পানি ফল খাওয়ার উপকারিতা :

গর্ভাবস্থায় পানি ফল খাওয়া বেশ উপকারিতা রয়েছে। একজন গর্ভবতী মায়ের জন্য পানি ফল খাওয়া একটি সুস্থ পুষ্টিকর পদার্থ সরবরাহ করে যা গর্ভস্থ শিশুর মাতৃত্বের জন্য অত্যন্ত প্রয়োজনীয়।

 নিম্নে গর্ভাবস্থায় পানি ফল খাওয়ার উপকারিতা গুলো দেয়া হল :

পুষ্টি সরবরাহ :পানি ফলের পুষ্টি উপাদান অনেক বেশি পরিমাণে থাকে, যেমন ফলিকা এসিড, আয়রন, ভিটামিন সি, পটাশিয়াম, ইত্যাদি। এই উপাদানগুলো গর্ভবতী মা এবং শিশুর সুষ্ঠ বৃদ্ধির জন্য খুবই উপযোগী। 


হাইড্রেশন :গর্ব অবস্থায় পানিফল খাওয়া হাইড্রেশন পরিবর্তন সাধারণত বাড়ানোর জন্য সহায়তা করে। একটি দ্রুত তরলীকরণ প্রক্রিয়ার সমর্থিত হয় এবং মাতৃত্বের জন্য ভালো হাইড্রেশন বজায় রাখে। 

পেটের ব্যথার সমাধান :গর্ব অবস্থায় গর্ভবতী মায়ের অনেক সময় পেটের ব্যাথা অনুভব করেন।তাদের পেটের ব্যথা কমাতে এবং পেটের কম্প্রেশন উপশম করতে পানিফল সাহায্য করে । 

পানিফল খাওয়ার অপকারিতা:

  • যেসব ব্যক্তির কোষ্ঠকাঠিন্যের সমস্যা রয়েছে তাদের ক্ষেত্রে পানিফলকে এড়িয়ে চলাই ভালো।
  • পানি ফল খাওয়ার পর পানি না খাওয়াই ভালো। কারন এটি একটি জলজ ফল। পানি ফল খাওয়ার পর পানি খেলে সর্দি কাশি হতে পারে।
  • পানিফল অতিরিক্ত খাওয়া ঠিক নয়। কারণ পানিফল অতিরিক্ত খেলে পেটে ব্যথা অনুভব করে এবং পেট ফোলাভাব হতে পারে। 
  • পানিফল খুব তাড়াতাড়ি নষ্ট হয়ে যায়। আর যদি দেখা যায় পানিফল থেকে গন্ধ বেরোচ্ছে তাহলে এটি না খাওয়াই ভালো। 
  • অতিরিক্ত পরিমাণে পানি ফল খেলে পেটে বদহজম, গ্যাস, অম্বল ইত্যাদি শারীরিক সমস্যা দেখা দিতে পারে। 
  • যেসব ক্ষেত্রে এলার্জির সমস্যা রয়েছে। তাদের পানিফল না খাওয়ায় ভালো। কারণ পানিফল খেলে তাদের এলার্জি সমস্যা বেড়ে যেতে পারে । 

শেষ কথা: 

আজ আমরা আমাদের এই আর্টিকেলটির মাধ্যমে জেনে নিলাম পানিফলের উপকারিতা,পুষ্টিগুন,এবং অপকারিতা সম্পর্কে।এছাড়া আমরা আরো জানলাম পানিফলের ঔষুধি গুন,গর্বাবস্থায় পানিফল খেলে কি উপকার হয় ইত্যাদি বিষয়ে সমস্ত কিছু।আশা করছি আপনাদের কাছে আমাদের এই আর্টিকেল টি বোধগম্য হয়েছে।
যদি আপনাদের কাছে আমাদের এই আর্টিকেল টি ভালো লেগে থাকে তাহলে অন্যদের সাথে শেয়ার করবেন আর আমাদের কে কমেন্ট করে জানাবেন।এতক্ষণ আমাদের এই আর্টিকেলের সঙ্গে থাকার জন্য ধন্যবাদ।আসসালামু-আলাইকুম ।

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

অর্ডিনারি আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url