ল্যাম্প স্কিন ডিজিজ রোগের কারণ,ল্যাম্প স্কিন ডিজিজ বা LSD রোগের লক্ষণ

প্রিয় পাঠক আসসালামু আলাইকুম, আশা করছি আপনারা ভালো আছেন। আজ আমি আপনাদেরকে গবাদি পশুর খুবই মারাত্মক একটি রোগ ল্যাম্প স্কিন ডিজিজ বা LSDএই রোগটি সম্পর্কে আলোচনা করব।ল্যাম্প স্কিন ডিজিজ এটি একটি ভাইরাসজনিত গবাদি পশুর মারাত্নক রোগ।বলতে গেলে গবাদি পশুর যে কয়টি রোগ আছে।
ল্যাম্প স্কিন ডিজিজ রোগে কারণ এবং লক্ষণ জেনে নিন

এরমধ্যে ক্ষুর রোগের চেয়েও ল্যাম্প স্কিন ডিজিজ বা LSD রোগে মারাত্নক।আপনারা যদি গবাদি পশুর রোগ সম্পর্কিত এই আর্টিকেলটি শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত মনোযোগ সহকারে পড়েন তাহলে আপনারা আরো জানতে পারবেন ল্যাম্প স্কিন ডিজিজ বা LSD রোগের কারণ, ল্যাম্প স্কিন ডিজিজ বা LSD রোগের লক্ষণ 
সহ এই রোগ থেকে প্রতিকারের উপায়, এই রোগের ভ্যাকসিন ,চিকিৎসা এবং এই রোগটি গোবাদি পশুর শরীরে কিভাবে ছড়ায় সে সম্পর্কে। তাহলে চলুন দেরি না করে মূল আলোচনায় যাওয়া যাক।

ভূমিকা :

সম্প্রতিক সময়ে আমাদের দেশে গরুর লাম্প স্কিন ডিজিজ বা এল এস ডি রোগে আক্রান্তের সংখ্যা অনেক বেশি বেড়ে গেছে। একটি খামার কে অর্থনৈতিকভাবে ধ্বংস করার জন্য খুরা রোগের চেয়েও মারাত্মক রোগ হচ্ছে লাম্প স্কিন ডিজিজ বা এল এস ডি। এ রোগটি একটি ভাইরাস জনিত চর্মরোগ। এ-ই রোগটি আফ্রিকা মহাদেশে কয়েকবার মাহামারি আকারে দেখা দিল ।
আমাদের দেশে এখন পর্যন্ত মাহামরি আকারে দেখা যায়নি। আফ্রিকা মহাদেশ এই রোগে আক্রান্ত পশুর মৃত্যুর হার ছিল প্রায় ৪0% শতাংশ।আফ্রিকার জাম্বিয়ায় ১৯২৯ সালে সর্বপ্রথমে এ-ই রোগটি সনাক্ত করা হয়। যাও ১৯৪৩ সাল থেকে১৯৪৫ সালের মধ্যে মহাদেশের বিভিন্ন জায়গায় ছড়িয়ে পড়ে।এবং হাজার হাজার গরুর মৃত্যু হয়। এতে করে অনেক খামার বন্ধ হয়ে যায়।
৭০ থেকে ৮০ দশকের দিকে আফ্রিকার প্রায় সব দেশে এই রোগ ছাড়িয়ে পরে।এবং এতে করে অনেক খামারি ক্ষতির সম্মুখীন হয়।বর্তমানে বাংলাদেশেও লাম্প স্কিন ডিজিজের ভয়াল থাবা লক্ষ্য করা যাচ্ছে।তাই এল এস ডির ভয়াল থাবা থেকে রক্ষা পেতে আমাদের আগে থেকেই সজাগ এবং সচেতন থাকতে হবে।

ল্যাম্প স্ক্রিন ডিজিজ বা LSD রোগের কারণ :

এটি মূলত একটি পক্স ভাইরাস বা ল্যাম্প স্কিন ডিজিজ একটি ভাইরাস জনিত রোগ। ভাইরাসটি poxviridae পরিবারের অন্তর্ভুক্ত Capripox জাতীয় ভাইরাস। এ ভাইরাসটি ছাগল ভেড়ার পক্স ভাইরাসের সাথে এই ভাইরাসের অত্যন্ত মিল পাওয়া যায়।
এ ভাইরাসটি গরু মহিষের উভয়ের ক্ষেত্রে ছাড়াতে পারে। এই ভাইরাসটি এক গরু থেকে অন্য গরু হইতে পারে। ছাগল ভেড়া এই ভাইরাসটির প্রতিলিপি তৈরি করলেও ল্যাম্প স্কিন ডিজিজে আক্রান্ত হয় না। এছাড়া এই ভাইরাস দ্বারা মানুষের আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা নেই।

ল্যাম্প স্কিন ডিজিজ বা LSD রোগের লক্ষণ :

 ল্যাম্প স্কিন ডিজিজে আক্রান্ত প্রাণীর যে লক্ষণগুলো পরিলক্ষিত হয় তার নিম্নে আলোচনা করা হলো :

জ্বর :প্রথম পর্যায়ে এই রোগে আক্রান্ত প্রাণীর গাড়ির তাপমাত্রা ১০৪ ডিগ্রি থেকে ১০৬ ডিগ্রি ফারেনহাইট পর্যন্ত হয়। গায়ে প্রচন্ড ব্যথা, এবং খাবারের প্রতি অরুচি দেখা দেয়। ফলে আক্রান্ত প্রাণী কিছু খেতে চায় না। 

লালাক্ষরণ :আক্রান্ত প্রানির জ্বরের সাথে মুখ এবং নাক দিয়ে সব সময় লালা ঝরতে থাকে। আক্রান্ত প্রানির পা ফুলে যায় এবং দুই পায়ের মাঝখানে পানি জমা হয়ে ফুলে যায়।এবং অনেক সময় দেখা যায় ফুলে যাওয়ায় স্থানটি ফেটে গিয়ে ক্ষত সৃষ্টি হয়।

ক্ষত সৃষ্টি :আক্রান্ত প্রাণীর শরীরে চামড়ার নিচে অসংখ্য পিন্ড আঁকার ধারণ করে। পিন্ড গুলোর উপর থেকে ধীরে ধীরে লোম উঠে গিয়ে ক্ষত সৃষ্টি হয় ।একসময় দেখা যায় এই ক্ষতগুলো সমস্ত শরীরে ছড়িয়ে পড়েছে। 

পুজ ও রক্ত: আক্রান্ত প্রানির ক্ষতস্থান দিয়ে রক্ত ও পুজ বের হতে থাকে।যদি সঠিকভাবে ক্ষতস্থানের যত্ন না নেয়া হয় তাহলে একসময় দেখা যাবে ক্ষতস্থানগুলোতে যদি মশা মাছি বসে ধীরে ধীরে আরো মারাত্মক আকার ধারণ করবে। 

পশুর খাবারে প্রতি অরুচি :আক্রান্ত পশুর মুখে এবং পাকস্থলীতে ক্ষত সৃষ্টির কারণে পশুর খাবার এবং পানির প্রতি অনিহা দেখা দেয়। ফলে আক্রান্ত প্রাণী খাবার ও পানি গ্রহনের মাত্রা কমে যায়। 

ল্যাম্প স্ক্রিন বা LSDরোগের প্রতিকার:

যেকোনো রোগের ক্ষেত্রেই চিকিৎসার চাইতে প্রতিকারই অধিক গুরুত্বপূর্ণ। আমরা যদি প্রতিকারের মাধ্যমে কোন রোগকে নিয়ন্ত্রণ করতে পারি তাহলে অর্থের লোকসানের হাত থেকে রক্ষা পাওয়া যায় ।সে কারণে খামারে খামারের প্রতি উদাসীনতা দূর হয় এবং খামারি বেশি লাভবান হয়। নিম্নে এ রোগের প্রতিকার সম্পর্কে কিছু তথ্য দেয়া হল :

যেহেতু এই রোগ একটি ভাইরাসজনিত রোগ তাই এই রোগ থেকে মুক্তি পেতে চাইলে গরুকে নিয়মিত এলএস ডি রোগের ভ্যাকসিন করতে হবে। যেহেতু এই রোগটি পাদুর্ভাব আমাদের দেশে অনেক কম ছিল তাই এই রোগের ভ্যাকসিন উৎপাদন এবং ব্যবহারের পরিমাণও ছিল অনেক কম।তাই ভ্যাকসিন পাওয়াটা সহজলভ্য নয়।

আক্রান্ত পশুর খামারে যাতাযাত বন্ধ করে দিতে হবে এবং আক্রান্ত পশুর খামারের ভেতর থেকে কোন জিনিসপত্র নিয়ে এসে সুস্থ পশুর খামারে ব্যবহার করা যাবে না। আক্রান্ত গরুকে সেড থেকে আলাদা করে অন্য কোথাও মশারি দিয়ে ঢেকে রাখতে হবে রাখতে হবে।
কারণ আক্রান্ত গরুকে যদি মশা মাছি কামড়ানোর পর  সেই মশা মাছি সুস্থ গরুকে কামড়ায় তাহলে এই রোগের সংক্রামিত হওয়ার হওয়ার সম্ভাবনা বেশি থাকে। 

খামারের আশেপাশে এবং খামারের মধ্যে সব সময় পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন রাখতে হবে। যেন মশা মাছির উপদ্রব কম হয়এবং মশা মাছি যেন গরুকে না কামরায়। 

আক্রান্ত গাভীর দুধ তার বাছুরকে খেতে দেয়া যাবে না। প্রয়োজন হলে দুধ বের করে তা পুতে ফেলতে হবে। আক্রান্ত গরুকে পরিচর্যা শেষ করে সেই পোশাকে আবার সুস্থ গরুর পরিচর্যা করা যাবে না। কারণএটি অনেকটা ছোঁয়াচে  ধরনের রোগ। 

ক্ষতস্থানটিকে সব সময় ভায়োডিন অথবা স্যাবলনের পানি দিয়ে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন করে দিতে হবে। যেন মশা মাছি না বসতে পারে। 

ল্যাম্পস্কিন ডিজিজ বা LSD রোগটি কিভাবে পশুর শরীরে ছড়ায়:


ল্যাম্প স্কিন ডিজিজ এই রোগটি বিভিন্ন মাধ্যম দিয়ে পশুর শরীরে ছড়াই।এই রোগটি এক গরু থেকে অন্য গরুর শরীরে ছড়িয়ে পড়ার প্রধান মাধ্যম গুলো হচ্ছে :

মশা ও মাছি মাধ্যমে  :এই রোগটি ছাড়িয়ে পরার ক্ষত্রে প্রধান মাধ্যম হচ্ছে মশাওমাছি। এছাড়া অন্যান্য ক্রীটপতঙ্গের এর মাধ্যমে রোগটি ছাড়িয়ে পড়তে পারে। 

লালার মাধ্যমে:আক্রান্ত গরু এবং সুস্থ গরু যখন একসঙ্গে একই পাত্রে খাবার খাই তখন আক্রান্ত গরুর লালা সুস্থ করে শরীরে প্রবেশ করে, আবার যারা খামার পরিচর্যা করে তাদের শরীরের কাপড়ে আক্রান্ত গরুর লালা লেগে যায়।
সেই কাপড়-চোপড় পড়ে যদি সুস্থ গরুর খামারে প্রবেশ করে তাহলে কাপড়ে লেগে থাকা মাধ্যমে অনেক সময়  এক গরু থেকে অন্য গরুতে এই রোগটি ছাড়িয়ে পড়তে পারে।

দুধের মাধ্যমে :আক্রান্ত গরুর দুধে এই ভাইরাস থাকে। আর এই দুধ যদি সুস্থ বাছুর খায় তাহলে সেই বাছুরও আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা থাকে।

ষাড় গরুর সিমেন মাধ্যমে : ভাইরাস আক্রান্ত ষাড়ের সিমেন যদি সুস্থ গাভীর শরীরে প্রবেশ করানো হয় তাহলেও এই রোগে আক্রান্ত হতে পারে।

ল্যাম্প স্কিন ডিজিজ বা LSDরোগে  চিকিৎসা :

যেহেতু এই রোগ একটি ভাইরাস জনিত রোগ তাই এই রোগের ক্ষেত্রে নির্দিষ্ট কোন চিকিৎসা জানা নেই। এই রোগের ক্ষেত্রে কোন অ্যান্টিবায়োটিক ও কাজ করে না।বরং এই রোগে আক্রান্ত পশুকে যদি অ্যান্টিবায়োটিক ব্যবহার করা হয় তাহলে পশু দুর্বল হয়ে যায়।
প্রাথমিকভাবে আমরা প্রতি ১০০ কেজি ওজনের জন্য প্যারাসিটামল ট্যাবলেট ২টি,খাবার সোডা ৫০ গ্রাম,নিমপাতা বাটা ২৫ গ্রাম , গুড় ৫০গ্রাম প্রতি লিটার পানিতে একত্রে মিশ্রিত করে সকাল বিকাল সেবন করালে ল্যাম্প স্কিন ডিজিজ থেকে উপশম পাওয়া যায়।এছাড়া আক্রান্ত পশুকে প্রচুর পরিমাণ ভিটামিন সি,এবং স্যালাইন খাওয়ানো যায়।
এ সময় আক্রান্ত পশুকে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করে এরকম কিছু ওষুধ খাওয়ানো যেতে পারে যেমন লিভারটনিক, জিংক, ডিসিপি পাউডার,দিলে গরু এই রোগের সাথে লড়াই করার মত সাপোর্ট পেয়ে থাকে।

ল্যাম্প স্কিন রোগের ভ্যাকসিনের নাম :

যদিও এই রোগ একটি ভাইরাস জনিত রোগ।এবং এর কোন চিকিৎসা নাই সে ক্ষেত্রে প্রতিরোধ ই একমাত্র ভরসা। দেশের বড় বড় ডেইরি খামারের কথা চিন্তা করে বেঙ্গল ওভারসিজ লিমিটেড বিশ্বখ্যাত ভ্যাকসিন উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠান এমএসডি /ইন্টারভেট Lumpy vax নামে ভ্যাকসিন বাজারজাত করছে।
Lumpy vax ভ্যাকসিন টি সারা বিশ্বে সফলভাবে ল্যাম্প স্কিন ডিজিজ রোগের প্রতিরোধে হিসাবে কার্যকর বলে প্রমানিত। এ-ই ভ্যাকসিনটির বাজার মূল্য প্রতি ভায়েল ২৫০০ টাকা বা এর কমে বেশী হতে পারে।ভ্যাকসিন টি ১০মিলি ভায়েলে বাজারজাত করে থাকে।ভ্যাকসিন টি ২সিসি করে প্রতি টি গরু কে মাংসে অথবা শিরায় প্রয়োগ করতে হয়। তারপর ও এটি ব্যবহারের পূর্বে ব্যবহার বিধি দেখে নিবেন। 

শেষ কথা:

প্রিয় পাঠক আশা করছি আপনারা এই আর্টিকেলটির মাধ্যমে গবাদি পশুর মারাত্মক ভাইরাসজনিত রোগ ল্যাম্প স্কিন ডিজিজ বা LSD রোগ সম্পর্কে প্রয়োজনীয় তথ্য পেয়ে গেছেন।আপনাদের কাছে আমার এই আর্টিকেলটি ভালো লেগে থাকে এবং গবাদি পশুর রোগ সম্পর্কে আরো কিছু জানার থাকে তাহলে অবশ্যই কমেন্ট করে জানাবেন। ধন্যবাদ আসসালামু আলাইকুম।

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

অর্ডিনারি আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url